বর্তমান যুগে ইন্টারনেট থেকে উপার্জনের একটি মাধ্যম হলো, ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করা। তথ্যবহুল ও জ্ঞানগর্ভ ভিডিওর চেয়ে কৌতুক-রসিকতার ভিডিওতে সাড়া বেশি পাওয়া যায়, তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে কমেডি ভিডিও তৈরি করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কাজটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে দিন দিন বাড়ছে নতুন নতুন অ্যাপ।
এ ছাড়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল চালু করেছে নতুন নতুন কমেডি শো, যেখানে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা ও অশ্লীল কৌতুকগুলোই বেশি শোনানো হয়। এ কারণেই হয়তো বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, কৌতুকাভিনয় হলো আত্ম-অবক্ষয়। তাঁর মতে, কৌতুকাভিনয় এমন অনুভূতির সঞ্চার করে, যা নৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করে।
কৌতুক মানুষকে আল্লাহর জিকির থেকে দূরে রাখে। অনর্থক কাজে ব্যস্ত রাখে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানুষকে এই কাজের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ওগুলোকে হাসিঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
আর যদি সেটাকে রসালো করতে গিয়ে সেখানে মিথ্যা ও অশ্লীলতার অনুপ্রবেশ ঘটে, সেটা আরো জঘন্য বিষয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পছন্দ করে যে মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও পরকালে রয়েছ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি; আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ১৯)
তাই মুমিনের উচিত, এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এ ধরনের কাজকে পেশা হিসেবে না নেওয়া। নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে থেকে রসিকতা করার ব্যাপারে ইসলামে নিষেধ নেই। নিজের পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মাঝেমধ্যে রসিকতা করারও অনুমতি আছে। তবে সেখানে কোনো অশ্লীলতা ও মিথ্যার মিশ্রণ ঘটানো যাবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুক করছেন? তিনি বললেন, আমি কৌতুকচ্ছলে কখনো সত্য ছাড়া কিছু বলি না। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৭৬)
অনেক ক্ষেত্রে মানুষ কমেডি করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা জাতি-গোষ্ঠীকে ট্রল করে বসে। যা ইসলামে নিষিদ্ধ। একদিন আয়েশা (রা.) হাসির ছলে নবী (সা.)-কে জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালেন। রাসুল (সা.) তাতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)
মুমিন কোনো অনর্থক কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে যারা অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকে তাদের সফল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (মুমিনরা সফল) যারা অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকে। (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)। তা ছাড়া আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। হিসাব দিতে হবে তাঁর দেওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক জায়গায় ব্যবহূত হয়েছে কি না সে বিষয়ে। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সুরা : আল-ইসরা, আয়াত : ৩৬)
তাই আমাদের উচিত, কমেডির অনর্থক কাজ বর্জন করে সোনালি পরকাল বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করা।