দাজ্জালের শারীরিক গঠন হাদিসের বর্ণনায়

প্রকাশকালঃ ০৭ জুন ২০২৩ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ ২৮৩ বার পঠিত
দাজ্জালের শারীরিক গঠন হাদিসের বর্ণনায়

কিয়ামতের অন্যতম আলামত হলো দাজ্জালের আবির্ভাব। নবীজি (সা.)-এর হাদিসের ভাষ্য মতে, কিয়ামতের আগে দাজ্জালের আগমন ঘটবে। সে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তাই দাজ্জাল নিয়ে মুমিনের হৃদয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দেওয়া স্বাভাবিক।

হাদিস শরিফে দাজ্জালের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। সেগুলোর আলোকে আমরা জানার চেষ্টা করব দাজ্জাল দেখতে কেমন।

দাজ্জালের চোখ : দাজ্জালের একটি চোখ কানা হবে। এবং তা আঙুরের মতো ফোলা হবে।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, একদা মহানবী (সা.) লোকজনের সামনে মাসিহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেন, আল্লাহ ট্যারা নন। সাবধান! মাসিহ দাজ্জালের ডান চক্ষু কানা। তার চক্ষু যেন ফুলে যাওয়া আঙুরের মতো। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৩৯)


দাজ্জালের কপাল : দাজ্জালের কপালের একটু নিচে দুই চোখের মধ্যস্থলে কাফের লেখা থাকবে। ফলে ঈমানদার বান্দারা তাকে চিনে ফেলবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, দাজ্জালের চোখ ফোলা হবে। তার উভয় চোখের মধ্যস্থলে কাফির লেখা থাকবে। অতঃপর তিনি একেকটি হরফ উচ্চারণ করে বললেন, (আরবি) আর প্রত্যেক মুসলিম মাত্রই এ লেখা পাঠ করতে পারবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭২৫৫)

দাজ্জালের চুল : দাজ্জালের চুল হবে কোঁকড়ানো। এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে ওমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি ঘুমের অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কাবার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারইয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থূলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙুরের মতো। লোকেরা বলল, এ হলো দাজ্জাল! তার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হলো ইবনে কাতান, বনি খুযাআর এক লোক। (বুখারি, হাদিস : ৭১২৮)


দাজ্জালের উচ্চতা : হাদিসের ভাষ্য মতে দাজ্জাল বেঁটে হবে। রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন,...নিশ্চয়ই মাসিহ দাজ্জাল হবে বেঁটে, মুরগির পা বিশিষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩২০)

কঠিন আকৃতির দেহ : দাজ্জাল দেখতে খাটো হলেও তার দেহের গড়ন খুব শক্তপোক্ত। তামিম আদ-দারি (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে দাজ্জালের সাক্ষাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, একদা তিনি ‘লাখম ও জুযাম’ গোত্রের ৩০ জন লোকের সঙ্গে সমুদ্রযানে ভ্রমণ করছিলেন। এ সময় সমুদ্র তরঙ্গ তাদের নিয়ে এক মাস পর্যন্ত খেলা করে সূর্যাস্তের সময় উপকূলের দ্বীপে ভিড়িয়ে দেয়। অতঃপর তাঁরা জাহাজের কাছে কিছুক্ষণ বসে থেকে দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। সেখানে তাঁরা ঘন-লম্বা লোমবিশিষ্ট এক জন্তুর সাক্ষাৎ পেয়ে বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, তুমি কে? সে বলল, আমি জাসসাসা, তোমরা এই মন্দিরের লোকটির নিকট যাও, কেননা সে তোমাদের সংবাদের জন্য খুবই আগ্রহী। তামিম আদ-দারি বলেন, যখন সে একটি লোকের নাম বলে দিল, তখন সে শয়তান কি না এই ভয়ে আমরা দ্রুতগতিতে চলতে লাগলাম। অতঃপর মন্দিরে প্রবেশ করে দেখলাম, বিরাট দেহের অধিকারী এক ব্যক্তি। এরূপ মজবুত গড়ন এবং কঠিন আকৃতির লোক ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। তার দুটি হাত ঘাড়ের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে বাঁধা। অতঃপর তিনি হাদিস বর্ণনা করেন যে সে তাদের কাছে ‘বাইসান’-এর খেজুর বাগান ও যুগার ঝরনা সম্পর্কে আর উম্মি নবীর আবির্ভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে বলল, আমিই মাসিহ (দাজ্জাল)। শিগগিরই আমাকে বেরিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হবে...। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩২৬)


দাজ্জালের গায়ের রং : দাজ্জালের গায়ের রং লাল বর্ণের হবে, যা উপরোক্ত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি : ৭১২৮)

দাজ্জালের পা : দাজ্জালের পা অস্বাভাবিক হবে, যা সাধারণ মানুষের মতো নয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, উবাদাহ ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি লোকদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে বহুবার বর্ণনা করেছি, কারণ আমি আশঙ্কা করছি, তোমরা বুঝতে পারছ কি না? নিশ্চয়ই মাসিহ দাজ্জাল হবে বেঁটে, মুরগির পা বিশিষ্ট ও কুঞ্চিত কেশধারী, এক চোখবিশিষ্ট আলোহীন এক চোখধারী, যা বাইরের দিকে ফোলাও নয়, আবার কোঠরাগতও নয়। যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে তবে জেনে রাখো, তোমাদের রব কানা নন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩২০)