তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমের নাট্যনির্মাতা এবং শিল্পীরা একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ধূমপান, মাদকসহ নেতিবাচক দৃশ্য ও সংলাপ পরিহার করে সুস্থ বিনোদন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ’ ও ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ সম্মিলিতভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। তরুণদের সুরক্ষায় জনস্বাস্থ্য আইন ও রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
২৭ এপ্রিল ২০২৫ সকালে ঢাকার নিকেতনে মানস (মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা) ও ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় নাট্যাঙ্গনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, “নায়ক বা কেন্দ্রীয় চরিত্রের আচরণে সাধারণ দর্শক প্রভাবিত হয়। তাই নাটক ও চলচ্চিত্রে ধূমপান বা মাদকের দৃশ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা তরুণ সমাজকে গঠনমূলক পথে পরিচালিত করতে পারি, আবার ভুল পথেও ঠেলে দিতে পারি। শিল্পী ও নির্মাতাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।” তিনি আরও জানান, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘ সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিরেক্টরস গিল্ডের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য গীতালি হাসান, চয়নিকা চৌধুরী, অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গিল্ডের প্রশিক্ষণ ও আর্কাইভ সম্পাদক গাজী আপেল মাহমুদ, অভিনেতা মাসুদ রানা মিঠু, পরিচালক তমাল মাহবুব, সোলায়মান জুয়েল, কামরুল হাসান ফুয়াদ, ফিরোজ খান প্রমুখ।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৩ শতাংশ তরুণ। তাদের সুরক্ষায় বিনোদন মাধ্যমে ধূমপান ও মাদকের দৃশ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ইতিবাচক বিষয়বস্তুর প্রচার জরুরি।”
রাশেদ মামুন অপু বলেন, “টেকনোলজির অগ্রগতির ফলে নাটক-সিনেমা এখন ইন্টারনেট ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও সহজলভ্য। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ধূমপানকে হিরোইজম হিসেবে উপস্থাপন বন্ধে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ প্রয়োজন। পাশাপাশি শিল্পীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।”
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, “নাটক-চলচ্চিত্র শুধু বিনোদন নয়, এটি শিক্ষা ও সচেতনতার অন্যতম মাধ্যম। অল্প বয়সীদের আচরণ ও ভাষায় এর বড় প্রভাব পড়ে। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, “সবার জানা সত্ত্বেও তামাক কোম্পানির কারসাজির কারণে তামাকের প্রচারণা চলছে, যা তরুণদের আসক্ত করছে। ধূমপান থেকে শুরু করে মাদকাসক্তির ভয়াবহতার বিষয়ে নাট্য নির্মাতা ও শিল্পীদের সোচ্চার হতে হবে।” তিনি তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় সবাইকে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ ও অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্যসহ ৩০ জনেরও বেশি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।