|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০২:৪৪ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ১৯ জুন ২০২৩ ০১:৫০ অপরাহ্ণ

কোরবানি ওয়াজিব কাদের উপর


কোরবানি ওয়াজিব কাদের উপর


কোরবানি মহিমান্বিত এক আর্থিক ইবাদত, যা মহান আল্লাহ তাঁর সামর্থ্যবান বান্দাদের জন্য ওয়াজিব করেছেন। এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তবে শর্ত হলো, কোরবানির উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে না পৌঁছে এগুলোর গোশত, না পৌঁছে এগুলোর রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।

এভাবেই তিনি এগুলোকে (কোরবানির পশু) তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পারো, এ জন্য যে তিনি তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন, সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৭)।


অর্থাৎ কোরবানির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। পূর্ণ তাকওয়াসহ এই ইবাদত পালনে সচেষ্ট হতে হবে।

লোক-দেখানো কিংবা লোকলজ্জা থেকে বাঁচা ইত্যাদি উদ্দেশ্য কোরবানির মহিমা ক্ষুণ্ণ করে। আমরা অনেক সময় লোকলজ্জায় পড়ে পরিবারের যেসব সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় না করে এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করি, যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। এ জন্য কোরবানির বাজেট করার আগে আমাদের উচিত কোরবানি কাদের ওপর ওয়াজিব তা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া।

নিম্নে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তগুলো তুলে ধরা হলো—

এক. মুসলিম হওয়া। অতএব, অমুসলিমদের ওপর কোরবানির বিধান প্রযোজ্য হবে না।


দুই. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। অতএব, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক হলেও কোরবানি আবশ্যক নয়।

তিন. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। অতএব, পাগল সম্পদের মালিক হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে না।

চার. স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া। অতএব, দাসের ওপর কোরবানি করা আবশ্যক হবে না।


পাঁচ. মুকিম হওয়া, অর্থাৎ কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া।

ছয়. জাকাত ফরজ হয় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। অর্থাৎ কেউ ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। কোরবানির ওয়াজিব হওয়ার জন্য ওই সম্পদ এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (আদ দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা : ২১৯, খণ্ড : ৫)

আর নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখনো কোরবানি করা ওয়াজিব। সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমমূল্যের নগদ অর্থ বা বাড়ি বা ব্যাবসায়িক পণ্য বা অন্যান্য আসবাবপত্রের মালিক হবে। (তাবয়িনুল হাকায়িক, পৃষ্ঠা : ১০, খণ্ড : ৬)


অতএব আমাদের কর্তব্য, উল্লিখিত শর্তগুলো পরিবারের যাদের মধ্যে পাওয়া যায়, তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। এরপর যদি সামর্থ্য থাকে বাকি যাদের ওপর ওয়াজিব ছিল না, তাদের পক্ষ থেকেও দেওয়া যেতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, নারীর গয়না ও নগদ অর্থের কারণে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, কিন্তু কোরবানি দেওয়া হচ্ছে স্বামীর পক্ষ থেকে, যার ওপর কোরবানি ওয়াজিবই ছিল না। আবার অনেক সময় অবিবাহিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ছেলেমেয়েদের ছোট মনে করে তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। অথচ তাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার কারণে তাদের ওপরও কোরবানি ওয়াজিব ছিল।

কোরবানি দেওয়ার সময় এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা আবশ্যক। যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত তাদের অনেকে আবার বড় পশুতে শরিক দিতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় এক শরিক কিংবা দুই শরিক দেয়, অথচ দেখা যায় যে তার পরিবারের চার সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, তিনি একটু ছোট পশুতে কিংবা বকরি/ভেড়া দিয়ে কোরবানি করলে একই বাজেট দিয়ে চারজনের পক্ষ থেকেই দেওয়া যেত। যাদের সামর্থ্য কম, তাদের উচিত এ বিষয়গুলোও খেয়াল করা। মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫