মোঃ শফিকুল ইসলাম,চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি:-
পদ্মা নদী বিধৌত প্রমত্তা বড়াল নদী আজ বিলুপ্তির পথে।ঐতিহ্য এই পদ্মা নদী অপরিকল্পিত খনন, অবৈধ দখল আর দীর্ঘ দিনের অবহেলায় নদীটি আজ প্রায় মৃতপ্রায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন সময়ে নেয়া উদ্যোগ গুলোর কোনো কার্যকর প্রভাব পড়েনি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে।বড়াল রক্ষা কমিটির সদস্য ও রুলফাও-এর পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রক্ষা করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। না হলে বড়াল হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকেই।নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীরা জানান, নদীর স্রোতধারা সচল রাখতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়াল নদীর ইনটেক চ্যানেল খনন প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রায় ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯.১০ কিলোমিটার এলাকায় খননকাজ সম্পন্ন হয় ২০১০ সালে। তবে প্রকৃত মোহনা থেকে কিছুটা দূরে খনন হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি।ফলে বর্ষা মৌসুমেও বড়ালে পানি কম থাকে, আর শুষ্ক মৌসুমে মোহনা হয়ে পড়ে পানিশূন্য। নদীর দু পাশ জুড়ে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি থাকলেও পানি সংকটে পড়ছেন কৃষকরা।২০২৪ সালের জুলাই মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে উৎসমুখে ৪৫০ মিটার খননের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দায়সারা কাজের ফলে খনন করা বালু আবার নদীতেই ফিরে এসেছে।রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় পদ্মা নদীর একটি শাখা হিসাবে বড়াল নদীর উৎপত্তি। এটি রাজশাহী জেলার বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া ও বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া হয়ে যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। একসময় নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ নদীর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।কৃষক জারজিস শেখ বলেন, “উৎসমুখে অপরিকল্পিত খননের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পাল্টে গেছে। এখন শুধু পদ্মার পানি বিপদ সীমার ওপরে উঠলেই বড়ালে পানি আসে। পলি জমে নদীর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে।”কলেজ শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, “১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই নদী সংকুচিত হতে শুরু করে। এখন পুনঃখননের মাধ্যমে বড়ালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।”নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত করিম জানান, “বড়াল পুনঃখননের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষ হয়েছে। ৫২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রথম পর্যায়ে বড়াল নদীর ৪৮ কিমি, নারোদ নদীর ৪৩ কিমি এবং মুসা খান নদীর ৬ কিমি পুনঃখনন করা হবে।”অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত খনন এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আজ বড়াল নদী হারাচ্ছে তার অস্তিত্ব। সময় এখনই-সরকারি উদ্যোগ, সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী বড়ালকে রক্ষা করার। না হলে নদীটির অস্তিত্ব শুধু ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ থাকবে।