ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষের জনজীবন। একেবারে প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। কাজ করতে না পেরে অনেকে স্থান নিচ্ছে গাছতলায়। আবার বাসা বাড়িতে বিদ্যুতের লোডশেডিং এর ফলে বাসায় থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে গ্রামীণ ও শহরের মানুষের। এদিকে প্রচণ্ড গরম আর রোদে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কমেছে তাদের আয় রোজগার। এছাড়া প্রচন্ড তাপদাহের ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে শিশু ও বয়স্ক ডায়রিয়া রুগীর সংখ্যা।
এদিকে রাজারহাট আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা যায়, আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলায় ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাইদুল ইসলাম জানান, প্রচন্ড গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে। বেড়ে যায় তাপমাত্রা। এ পরিস্থিতিতে হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে। এছাড়া ঊষ্ণ আবহাওয়ার কারণে সর্দিজ্বর এবং ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ইতোমধ্যেই হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর চাপ বেড়েছে। তারমধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সাতদিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত রুগী ভর্তি আছে ৩০ জন। এর মধ্যে বয়স্ক থেকে শিশু রুগীর সংখ্যাই বেশি। তাপদাহের কারনে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ জন ডায়রিয়া রুগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
উপজেলার পশ্চিম বজরা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নুরুন্নবী মিয়া (৪২) বলেন, আমার ছেলে আবু সুফিয়ান (২ বছর ৩ মাস) অতিরিক্ত গরমের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করেছি আবু সুফিয়ানকে। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি চিকিৎসা চলছে।
এদিকে তীব্র গরমে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। তারা রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা রোজগার করে, তাই দিয়েই তাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আর এ সময় তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। নেই তেমন কোনো ভাড়া। যদিও ভাড়া আসে পাচ্ছেননা গরমে যেতে। বিপাকে পড়েছেন খেটে খওয়া মানুষেরা।
উপজেলার তেতুলতলা এলাকার ভ্যান চালক আব্দুল হামিদ (৬৫) জানান, তীব্র তাপদাহের কারণে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু আভাবের কারণে অতিরিক্ত গরমে ভ্যান নিয়ে বাহিরে বের হয়েছি। তিনি বলেন, অন্যান্য দিনে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক পাঁচশত থেকে আটশত টাকা আয় হলেও এখন হচ্ছে দুই থেকে তিনশত টাকা। আগে বাজার থেকে দশ কেজি চাল কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে দুই কেজি চাল। যা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে গেছে। এভাবে তাপদাহ চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তাপমাত্রা বিরাজমান রয়েছে ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে একটি লঘুচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর তিব্র তাপদাহ কিছুটা কমতে শুরু করবে বলে জানান তিনি।