দেশে প্রথম জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ শনাক্ত

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের ক্লাস্টার (গুচ্ছ) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যেখানে এক স্থানেই একাধিক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, একই এলাকায় পাঁচজন ব্যক্তি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, ওই এলাকার নাম প্রকাশ করা হয়নি। গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্তের পর এবার গুচ্ছ সংক্রমণের ঘটনা ঘটল।
ক্লাস্টার সংক্রমণ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি জানায়, ২০২৩ সালে ঢাকার রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আসা জ্বরে আক্রান্ত ১৫২ রোগীর নমুনা পিসিআর ভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের নমুনায় জিকা ভাইরাস পাওয়া যায়, যাদের সবাই এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাস করেন। তাদের কেউ দুই বছরের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেননি এবং সবাই একই সময়ে পরীক্ষা করান, যা এই সংক্রমণটির এক সূত্রে সংক্রমিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া, পাঁচজনের মধ্যে একজন ডেঙ্গু ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
আইসিডিডিআর,বির ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, সমগ্র জিনোম সিকোয়েন্সিং ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ দ্বারা দেখা যায়, বাংলাদেশি জিকা ভাইরাসের স্ট্রেইন এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত, যা ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া ও চীনে শনাক্ত হয়েছিল। এই স্ট্রেইন আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি এবং অন্যান্য স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।
আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, উষ্ণ তাপমাত্রা এবং দীর্ঘ বর্ষাকাল এডিস মশার প্রজনন জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে, যা মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের কারণ। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি জিকা ভাইরাসও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। জিকা ভাইরাস প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় বানরের শরীরে শনাক্ত হলেও, ১৯৫২ সালে প্রথম মানবদেহে শনাক্ত হয় এবং পরবর্তীতে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর মতো উপসর্গ দেখা দিলেও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি ধরা পড়ে না এবং রোগী বছরের পর বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে এবং আক্রান্ত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে শিশুর শারীরিক জটিলতা হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে আইইডিসিআর পরিচালিত একটি গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। ওই গবেষণায় ২০১৪ সালে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছিল, যদিও ওই রোগীর বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিল না। এটি ধারণা করা হয় যে, ২০১৫ সালে ব্রাজিলে প্রাদুর্ভাব হওয়ার আগেই বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস গোপনে ছড়াচ্ছিল।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫