|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৩:৪৪ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

মূলধন হারানো সঙ্কায় আলু তুলছেন কুড়িগ্রামের কৃষকেরা


মূলধন হারানো সঙ্কায় আলু তুলছেন কুড়িগ্রামের কৃষকেরা


ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

.

‘হামার তিস্তার চরে এবার আলু নয়, সোনা ফলছে। সেই সোনা দেখে খুশি হইছুনু। কিন্তু এখন আলু হামাগোর গলার কাঁটা হইছে। লোনের চাপে পানির দামে বিক্রি করবার নাগছি। তাতে অর্ধেক লোকসান হইবে। এখন কী করমো, কী খামো সে চিন্তায় আইতোত (রাতে) নিন্দ (ঘুম) আইসে না।’
 

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুরের অর্জুনেরচরের কৃষক নজরুল ইসলাম। তিন একর জমিতে আলু আবাদ করতে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়েছে তাঁকে। প্রতি একরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলেও দাম পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচ নিয়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা পড়লেও, বিক্রি করতে হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়।
 

ক্ষোভ প্রকাশ করে গোড়াই পিয়ার চরের আলুচাষি চাঁদ মিয়া বলেন, ‘আড়তদারের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়া চড়া দামে সার-বীজ ও জমি ভাড়া করে ৮ একর জমিত আলুর আবাদ করছি। এখন ১০০ টাকার আলু ১৩ টাকায় বিক্রি করছি। যুদ্ধ করে আবাদ করে আমার কী হয়। কৃষককে দেখার কেউ নেই।’
 

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে তিস্তার দুই পারে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২১টি চরেই ৬০০ হেক্টরে আলুর চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন হলেও, ভালো বাজার দাম না পেয়ে কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। শত শত বিঘা জমির আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে। আড়তদারের ঋণের চাপ সামলাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন ইঁদুর মারার চরের হামজা শেখ ও চর নাটসালার নুর ইসলামের মতো অনেক কৃষক।
 

তাদের স্বজনরা জানান, দাম কমে যাওয়ায় আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে। তুলতে গেলে শ্রমিকের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাবে। ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে না। আলু চাষ করে এবার তারা ফকির হয়ে গেছেন।
 

কিশোরপুর চরের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় হিমাগার নেই। আলু সংরক্ষণের জন্য কুড়িগ্রাম শহরে যেতে হয়। সব কৃষক আবার এ সুযোগ পান না। দালালরা আগে থেকেই হিমাগার বুকিং দিয়ে রাখে। তাদের কারণে সবাই হিমাগারে সাশ্রয়ী মূল্যে আলু রাখার সুযোগ পান না। তাতে খুব একটা লাভ পান না কৃষক। আলু সংরক্ষণে তারা উলিপুরে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
 

হিমাগার অগ্রিম বুকিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে উলিপুরে বিক্রয় প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান ও রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য করেননি তারা।
 

থেতরাই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, কৃষকরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আবাদ করেন। সেই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করেন। এ কারণে ভালো ফলন হলেও দাম না পেয়ে তাদের ভাগ্য ফেরে না। আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা।
 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, সংকট নিরসনে উপজেলা পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আলু ও সবজি সংরক্ষণে স্থানীয় পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। তখন কৃষক ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবেন।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫