পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন আর প্রয়োজন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "পাসপোর্ট আমার নাগরিক অধিকার। আমি চোর না ডাকাত, সেটা নির্ধারণ করা পুলিশের দায়িত্ব। জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয়নি, তাহলে পাসপোর্টের ক্ষেত্রে কেন হবে?"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আইন প্রণয়ন করেছি, কিন্তু সেটি এখনো তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এর ফলে সাধারণ মানুষ অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকার মানেই জনগণের সেবা দেওয়া, হয়রানি করা নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।"
রবিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনটি আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।
সম্মেলনের অংশ হিসেবে আজ ডিসিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক ও রাতে নৈশভোজের আয়োজন রয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ডিসিরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। তবে এবার তারা আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকরা ৬৪ জেলা ও ৮ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া, পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য পৃথক তদন্ত বিভাগ গঠনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের যাতায়াত সমস্যা সমাধানে চারটি বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে তারা সময়মতো অফিসে উপস্থিত হতে পারেন।
এবারের ডিসি সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর মিলিয়ে ৩৫৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে, যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ জানান, গত বছর ডিসি সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মাত্র ৪৬% বাস্তবায়িত হয়েছে। অনেক বিষয় নতুন সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে না পড়ায় বাস্তবায়নের হার কম। ভূমি ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ পুনর্বাসন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর এবারের সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ডিসিরা জেলা পুলিশের এসিআর দেওয়ার ক্ষমতা, অপরাধ ও এনআইডি ডেটাবেজে প্রবেশাধিকার, বিশেষ ফোর্স গঠন, উপজেলা পরিষদের কর্মচারী নিয়োগ ও বদলির ক্ষমতা তাদের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া, প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি জনবল বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে।