প্রকাশকালঃ
২১ মার্চ ২০২৩ ০৫:২৯ অপরাহ্ণ ৩৫৭ বার পঠিত
শিক্ষকদের নিয়োগ দুর্নীতির পর এবার পৌরসভার চাকরি কেলেঙ্কারি। ৬০টি পৌরসভায় পাঁচ হাজার চাকরি বিক্রির অভিযোগ।
পশ্চিমবঙ্গে এবার নতুন নিয়োগ কেলেঙ্কারি। শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির পর এবার পৌরসভার চাকরি বিক্রির অভিযোগ করলো ইডি। অয়ন শীল নামে একজনকে ৩৭ ঘণ্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পর তাকে সোমবার ভোরে গ্রেপ্তার করে ইডি।
অয়নকে আদালতে পেশ করে ইডির আইনজীবী দাবি করেছেন, তারা ‘সোনার খনি'র খোঁজ পেয়েছেন ধৃতের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইল, হার্ড ডিস্ক ও ম্যাকবুকে! কলকাতার বিধাননগরে অয়নের বাসস্থানে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে। মিলেছে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা, অ্যাডমিট কার্ড ও পৌরসভার নথি। তদন্তকারীরা হানা দেন তার হুগলির বাড়িতেও।
কলকাতা পৌরসভা-সহ লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা ও অন্য জেলার ৬০টি পৌরসভায় অয়নের মধ্যস্থতায় পাঁচ হাজার নিয়োগ হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। এবিএস ইনফোজোন নামে অয়নের সংস্থা পৌরসভার কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ওএমআর শিট সরবরাহের বরাত পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন ধৃতের আইনজীবী।
এর মাধ্যমেই দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছে পৌরসভা, দমকলের মতো সরকারি দপ্তরেও। টাইপিস্ট থেকে মজদুর, বিভিন্ন পদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে প্রার্থীদের। প্রত্যেক পদের জন্য ‘রেট' নির্ধারিত ছিল। সেই রেট ছিল বশ কয়েক লাখ টাকা। ২০১২ ও ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার সঙ্গে অয়নের যোগ রয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃতদের জেরা করে কেন্দ্রীয় সংস্থা নাগাল পেয়েছে অয়নের। হেফাজতে থাকা হুগলির বহিষ্কৃত তৃণমূল যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ তিনি। অয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ কোটি টাকা লেনদেনের নথি মিলেছে যার সঙ্গে দুর্নীতির যোগ রয়েছে বলে ইডির। অয়নের স্ত্রী কাকলি শীল ও ধৃতের পরিচিত শ্বেতা চক্রবর্তীর নামও উঠে এসেছে।
তদন্তকারীদের দাবি, শান্তনুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তাদের যোগসূত্র হিসেবে সক্রিয় ছিলেন হুগলির আর এক বহিষ্কৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রশ্ন, দুর্নীতির সঙ্গে শাসক দলের শীর্ষ মহলের যোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
যদিও শাসক শিবির আগের জমানার দিকে আঙুল তুলছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ''২০০২ সাল থেকে অয়ন হুগলিতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করেছেন। সেই বাম আমল থেকে তিনি কাদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন, তা তদন্তের আওতায় আসুক।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ফের চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, ''গত ১২ বছরে তৃণমূল সরকার কেন সেই দুর্নীতি প্রকাশ করেনি? সাহস থাকলে এখনো করুক।'' বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, "পৌরসভার নথি খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, তৃণমূল ছাড়া আর অন্য কেউ চাকরি পেয়েছে কি না।”
এর আগে শান্তনু ও কুন্তলের সঙ্গে টলিউডের যোগাযোগ সামনে এসেছিল। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, অয়নের সঙ্গেও যোগ রয়েছে টলিপাড়ার। তিনি ‘কবাডি কবাডি' নামে একটি ছবির প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টলিপাড়ার সংগঠন ‘ইম্পা'-র সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''সরকার এটাকে ছোট ভুল বা দালালচক্রের কাজ বলে চালাতে চাইছে। কিন্তু স্কুলে বা দপ্তরে হাজার হাজার চাকরি বিক্রি হলে বোঝা যায় সরকার যথেষ্ট কঠোরতা দেখায়নি। এর দায় তারা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না।''
টাকার বিনিময়ে চাকরিকে বেকারত্বের সঙ্গে জুড়ে দেখতে চাইছেন প্রবীণ সাংবাদিক শিখা মুখোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''সারা দেশে চাকরি নেই। পশ্চিমবঙ্গেও নেই। তাই অর্থবান মানুষরা চাকরি কিনতে চাইছে। একদল লোভী মানুষ চাকরি বিক্রি করছে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলি কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারলে এই চক্র থেকে বেরোনো যাবে না।''
প্রথমে শিক্ষক এবং এখন পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির পর এই প্রশ্নও উঠেছে, সব সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কি হয় স্বজনপোষণ হয়েছে বা বিক্রি করা হয়েছে?