সোনারগাঁয়ে ২০১২ সালের আগে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা ও বর্ষবরন অনুষ্ঠান অনেকটাই ছিলো প্রাণহীন ও নিস্তেজ।সোনারগাঁয়ে সরকারী অর্থের অপচয় রোধে ২০১২ সালে বৈশাখী মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগরিকা নাসরিন।
২০১২ সালের আগে সোনারগাঁয় বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চ তৈরি করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হতো। তাতে সরকারি অর্থের অপচয় হত।
তারপর একদিন...তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাগরিকা নাসরিনের তত্ত্বাবধানে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের পেছনে ভট্টপুর প্রাইমারি স্কুলের সামনে বিশাল বিশাল গর্ত/খানা খন্দের মাঝখানে দাঁড়ানো প্রাচীন বটগাছকে কেন্দ্র করে, লক্ষ টাকার মাটি ভরাট করে ,স্থায়ী বৈশাখী মঞ্চ তৈরি করে ২০১২ সালে প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হল। যেখানে এখন কয়েক দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজিত অর্থ সরাসরি কোষাগারে জমা হয়।
মঞ্চের সামনে যেখানে ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়, দেশপ্রেমের নিদর্শন স্বরূপ জাতীয় পতাকার টাইলস বসানো হয়েছিল সেখানে। আর মঞ্চের পিছন দিকে অর্থাৎ নদীর দিকে বসানো হয়েছিল জাতীয় সংগীত লেখা টাইলস। শ্বাশত সেই নদীর কূল, আর বটের মূল। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এভাবেই তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করি।
২০১২ সালের আগে যেখানে বৈশাখী শোভাযাত্রা ছিল রঙিন মুখোশ, লোকজ শিল্প, পটচিত্র ও ঢাক-ঢোলের আনন্দঘন পরিবেশ তেমন চিত্র আর দেখা যেত না।
জনসমাগম ছিলনা আশানুরূপ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা যায়নি অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষকে। অনেকেই বলছেন, ব্যক্তিগত ব্যস্ততা এবং উৎসব উদযাপনে আগ্রহের অভাবই এর প্রধান কারণ।শোভাযাত্রার সাজসজ্জায়ও ছিল চোখে পড়ার মতো ঘাটতি। চোখ ধাঁধানো কোনো মুখোশ বা লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টাও ছিল না। অনেকটা দায়সারা অনুষ্ঠান মনে হয়েছে অনেক দর্শনার্থীর কাছেই।
শোভাযাত্রায় প্রতিবছর ঘোড়দৌড়, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, পালকী, কামাড়, কুমাড়, তাতী, জেলে, বাউল, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ, খিষ্টান, ইত্যাদি সাজে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করতেন। এতে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাকে একটু আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বাংলার আবহমান চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হয়। যেটা প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। এখানে ধর্মীয় সম্প্রিতীর একটা মেল বন্ধন তৈরি হয়। সকল ধর্মের মানুষ এখানে অংশ নেয়।
এবিষয়ে তৎকালীন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমান যুগ্মসচিব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাগরিকা নাসরিন আবেগ আপ্লুত হয়ে গণমাধ্যমকে বলেন বৈশাখী মঞ্চের উদ্দেশ্য ছিল- সোনারগাঁর মানুষকে শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে-চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ করা। উদ্দেশ্য কতটুকু সার্থক হয়েছে সোনারগাঁ বাসি ভালো বলতে পারবেন।
তবে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে সোনারগাঁ থেকে পাঠানো বৈশাখ উদযাপনের ছবিগুলো দেখে আনন্দের পাশাপাশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি সকল সৃষ্টির পিছনে অনিবার্য উল্লাস থাকে।
বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলাতে এরকম উন্মুক্ত মঞ্চ থাকুক , সেদিনের মতো আজও এই প্রত্যাশা।