|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৩ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’, দুটি মামলা


মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’, দুটি মামলা


রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দুটি করা হয়।
 

বুধবার মধ্যরাতে চাঁদ উদ্যান এলাকায় সংঘটিত ওই অভিযানে দুইজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী নিহত হন এবং পাঁচজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদ হাসান সমকালকে জানান, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে, যেখানে ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত দুইজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
 

নিহতরা হলেন– মিরাজ হোসেন ও মো. জুম্মন। তারা চাঁদ উদ্যান এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। মিরাজের বাড়ি ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার নুরাবাদ গ্রামে এবং জুম্মনের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দেশভুয়াই গ্রামে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল এবং তারা আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা কুখ্যাত ‘কবজি কাটা আনোয়ার’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন এবং এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিলেন।

 

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার জানান, বুধবার মধ্যরাতে চাঁদ উদ্যানের লাউতলায় ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সংবাদ পেয়ে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে দুজন নিহত হয় এবং পাঁচজনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়।
 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন– ভোলার দুলারহাটের মো. হোসেন, লালমোহনের মিরাজ, মমিনুল, মেহেদী ও বরিশালের মুলাদী উপজেলার সেলিমপুরের আল আমিন। তারা সবাই চাঁদ উদ্যান ও কেরানীগঞ্জে ভাড়া থাকতেন।

 

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যৌথ বাহিনীর দলটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে চাঁদ উদ্যান এলাকায় অভিযান চালায়। সন্ত্রাসীরা একটি একতলা ভবনের ছাদ থেকে আভিযানিক দলটির ওপর গুলি চালালে বাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। অভিযানে পাঁচজনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয় এবং ভবনের ছাদ থেকে দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আইএসপিআর জানিয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

বৃহস্পতিবার চাঁদ উদ্যান ৬ নম্বর রোডে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির সামনে মানুষের জটলা। সবার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। এক পর্যায়ে একজন বলেন, ‘এই বাড়িতে দুজন মারা গেছে। তারা এলাকায় দুষ্কর্ম করত, সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ ছিল।’
 

অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় চায়ের দোকানি হাসনাইন হাসান জানান, রাত ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাকে থামিয়ে পাশের মুদি দোকানে অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর তিনি আর কিছু দেখেননি। পরে জানতে পারেন, পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
 

ঘটনাস্থলে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, টিনের চালের ওপর দুইজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। নিহত জুম্মনের হাতে একটি চাপাতি এবং মিরাজের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকা দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের জন্য ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় এলাকাটি বারবার শিরোনামে এসেছে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর থেকে কুখ্যাত ‘কবজি কাটা গ্রুপের’ প্রধান আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আধিপত্য বিস্তারের জন্য এ গ্যাং অন্তত সাতজনের কবজি কেটে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
 

এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্থানীয়রা জানান, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, বছিলা, সাতমসজিদ হাউজিং ও সোনা মিয়ার টেক এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। তারা দিনে-রাতে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় এবং অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।
 

স্থানীয়দের দাবি, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে বসবাস করতে পারে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫