প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পবিত্র কোরআনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সারা বিশ্বের হাফেজরা। এ জাতীয় প্রতিযোগিতার প্রধান লক্ষ্য হলো কোরআন মুখস্থকরণ, বিশুদ্ধ উচ্চারণ, শাব্দিক অর্থ ও আয়াতের ব্যাখ্যা জানার প্রতি মানুষকে অনুপ্রাণিত করা। গত অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে কয়েকটি মুসলিম দেশ কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে।
নিম্নে এমন কয়েকটি দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো।
মালয়েশিয়ায় ৬২ বছর ধরে কোরআন প্রতিযোগিতা
মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতাকে আধুনিক বিশ্বে কোরআন বিষয়ক সবচেয়ে পুরনো প্রতিযোগিতা বলে মনে করা হয়। দেশটির ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ১৩৭০ হিজরি মোতাবেক ১৯৬১ সালে মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুংকু আবদুর রহমান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশকে নিয়ে এই প্রতিযোগিতা শুরু করেন।
গত বছরের অক্টোবরে এই প্রতিযোগিতার ৬২তম পর্ব মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়।
কোরআন প্রতিযোগিতা আয়োজনে সৌদি আরবের ভূমিকা
কোরআন প্রতিযোগিতা আয়োজনে সৌদি আরবের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। দেশটির ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৩৯৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৮ সাল থেকে কোরআন হিফজ ও তাফসির বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। প্রতিযোগিতাটির আনুষ্ঠানিক নাম কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল কমপিটিশন ফর দ্য মেমোরাইজেশন, রিসাইটেশন অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটেশন।
গত বছর প্রতিযোগিতাটির ৪২তম পর্বে ১১১টি দেশের ১৫৩ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। তখন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে যথাক্রমে দুই লাখ রিয়াল, এক লাখ ৮৫ হাজার রিয়াল ও এক লাখ ৭০ হাজার রিয়াল পুরস্কার দেওয়া হয়। ছয়টি বিভাগে এই প্রতিযোগিতা হয়। তা হলো : ১. তাজবিদ ও শাতেবি পদ্ধতিতে সাত কিরাতসহ সুন্দর কণ্ঠে পূর্ণ কোরআন মুখস্থ, ২. তাজবিদসহ সুন্দর কণ্ঠে পূর্ণ কোরআন মুখস্থ এবং একক শব্দের তাফসির, ৩. তাজবিদসহ সুন্দর কণ্ঠে পূর্ণ কোরআন মুখস্থ, ৪. তাজবিদসহ কোরআনের ২০ পারা মুখস্থ, ৫. তাজবিদসহ ১০ পারা মুখস্থ, ৬. তাজবিদসহ পাঁচ পারা মুখস্থ।
ইরানে ছেলে ও মেয়েদের জন্য কোরআন প্রতিযোগিতা
সরকারি উদ্যোগে কোরআন প্রতিযোগিতা আয়োজনে ইরানের নাম খুবই পরিচিত।
১৯৮২ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল হলি কোরআন কম্পিটিশন নামে তা শুরু হয়। সেই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ ১২টি দেশ অংশ নিয়েছিল। ১৯৮৩ সাল থেকে মেয়েরাও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শুরু করে। প্রতিবছর রজব মাসে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে দেশটির আওকাফ ও দাতব্য বিষয়ক সংস্থা। গত ফেব্রুয়ারিতে এর ৩৯তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ৩৩ দেশ থেকে ৫২ জন ছেলে ও মেয়ে অংশ নেয়। প্রতিযোগিতাটি ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক দুই ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয়। তা হলো : ১. পুরো কোরআন মুখস্থ, ২. তারতিলসহ কোরআন পাঠ।
মিসরের কোরআন প্রতিযোগিতায় নান্দনিকতা ছাপ
মিসরে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪১৪ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তা অনুষ্ঠিত হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার ২৯তম পর্বে ৫৮টি দেশের ১১১ প্রতিযোগী অংশ নেন। মূলত ৮ ক্যাটাগরিতে ছেলে ও মেয়েরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে। তা হলো : ১. অর্থ ও উদ্দেশ্য বোঝাসহ সুন্দর কণ্ঠে পুরো কোরআন মুখস্থ, ২. পুরো কোরআন মুখস্থসহ তাফসির ও উলুমুল কোরআনের প্রায়োগিক বর্ণনা, ৩. সাত কিরাতসহ পুরো কোরআন মুখস্থ, ৪. অনারবদের জন্য পুরো কোরআন মুখস্থ ৫. তাজবিদ, তাফসির ও উদ্দেশ্য বোঝাসহ পুরো কোরআন মুখস্থ, ৬. পুরো কোরআন মুখস্থসহ আমপারা অংশের তাফসির ও শাব্দিক অর্থ, ৭. কোরআনের পরিবার, ৮. আদর্শ শিক্ষক। প্রথম ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীরা পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে আড়াই লাখ, দেড় লাখ ও এক লাখ হাজার মিসরীয় পাউন্ড পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন।
দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় থাকে সম্মাননা পর্ব
আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন রাশিদ আলে মাকতুমের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪১৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৮ সাল থেকে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কোরআন অ্যাওয়ার্ড নামে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। গত এপ্রিলে প্রতিযোগিতার ২৬তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে আড়াই লাখ দিরহাম, দুই লাখ দিরহাম ও দেড় লাখ দিরহাম পুরস্কার ছিল। এদিকে মেয়ে হাফেজাদের নিয়ে শাইখা ফাতেমা বিনতে মুবারক আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা ও শাইখা হিন্দ বিনতে মাকতুম কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বর্ষসেরা ইসলামী ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা, কোরআনের পাণ্ডুলিপি বিষয়ক গবেষণা, স্থানীয় হাফেজদের সুন্দর তিলাওয়াত নিয়েও প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।
মরক্কোর কোরআন বিষয়ক নানা বিষয়ের প্রতিযোগিতা
মরক্কোর আওকাফবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবছর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ সিক্স অ্যাওয়ার্ড ফর দ্য হলি কোরআন নামে প্রতিযোগিতাটি ১৪২৩ হিজরি মোতাবেক ২০০২ সালে শুরু হয়। কোরআন হিফজের পাশাপাশি হাদিস ও ক্যালিগ্রাফি, হিফজের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, কোরআন-বিষয়ক জ্ঞান প্রসারের জন্য একজন ব্যক্তিকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়। মূলত দুই ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এক. তাফসিরসহ পুরো কোরআন মুখস্থ। দুই. তাজবিদসহ কোরআন পাঁচ পারা মুখস্থ। প্রথম ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৪০ হাজার ও ৩০ হাজার দিরহাম দেওয়া হয়।
কুয়েতে কোরআন প্রতিযোগিতার বর্ণাঢ্য আয়োজন
কুয়েত সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ২০১০ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর মেমোরাইজিং দ্য কোরআন, ইটস রি