মসজিদ পৃথিবীর সর্বাধিক পবিত্র ভূমি। মসজিদ আল্লাহর ঘর। এই ঘরে প্রবেশের বিশেষ নিয়ম-নীতি আছে। এখানে মসজিদের বসার আদব সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো—
মসজিদের আদব হলো কিবলামুখী হয়ে বসা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিটি বস্তুর একজন সরদার আছে। আর মজলিসগুলোর সরদার হলো কিবলাকে সামনে রেখে বসা। (সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ২৬৪৫)
মসজিদে কাউকে ডিঙিয়ে কাঁধের ওপর দিয়ে না যাওয়া মসজিদের অন্যতম শিষ্টাচার। আবদুল্লাহ বিন বুসর (রা.) বলেন, একদা জুমার দিন এক ব্যক্তি লোকদের ঘাড় ডিঙিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল।
মসজিদে বসার সময় ফাঁকা ফাঁকা না হয়ে মিলেমিশে বসতে হবে। সালামান ফারসি (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, নিজের তেল ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর নির্ধারিত সালাত আদায় করে, ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তার সে জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
মসজিদে দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিকে গুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে না বসা। মুআজ বিন আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) জুমার দিন ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিকে গুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে মাটিতে নিতম্ব রেখে বসা থেকে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৫১৪)
মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ। সায়িব ইবনু ইয়াজিদ (রা.) বলেন, একদা আমি মসজিদে দণ্ডায়মান ছিলাম, এমন সময় আমাকে একজন লোক কংকর মারল। আমি দেখি তিনি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)।
তিনি আমাকে বললেন, যাও, ওই দুই ব্যক্তিকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আমি তাদের নিয়ে এলাম। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন গোত্রের বা কোথাকার লোক? তারা বলল, আমরা তায়েফের লোক। ওমর (রা.) বলেন, যদি তোমরা মদিনার লোক হতে তাহলে আমি তোমাদের নিশ্চয়ই কঠিন শাস্তি দিতাম। রাসুল (সা.)-এর মসজিদে তোমরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছ? (বুখারি, হাদিস : ৪৭০)
মসজিদে অন্য মুসল্লির অসুবিধা করে উচ্চৈঃস্বরে জিকির করা, এমনকি কোরআন তিলাওয়াত করাও নিষেধ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মসজিদে ইতিকাফ করছিলেন। তিনি সাহাবিদের শুনতে পেলেন তারা উচ্চ আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াত করছে। তাদের তিলাওয়াত শুনে তিনি পর্দা খুলে বলেন, মুসল্লি তার রবের কানে কানে কথা বলে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ করে সে তার রবের সঙ্গে কী বলছে। আর তোমাদের কেউ যেন একে অপরের ওপর উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তিলাওয়াত না করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৩২)