‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্র নির্মাণের পিছনের গল্প জানালেন নির্মাতা বিপ্লব সরকার

প্রকাশকালঃ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:০৯ অপরাহ্ণ ২৯৭ বার পঠিত
‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্র নির্মাণের পিছনের গল্প জানালেন নির্মাতা বিপ্লব সরকার

'সিনেমায় বিচ্ছিন্নতার গল্প বলেছি। চেষ্টা করেছি যথাসম্ভব কম সংলাপ রাখার। এতে করে চরিত্রগুলোর পরস্পরের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ফুটিয়ে তুলতে সুবিধা হয়েছে আমাদের।' ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্র নির্মাণের পিছনের গল্প জানালেন নির্মাতা বিপ্লব সরকার।

এটি তাঁর প্রথম কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। এটি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৮তম আসরের প্রধান প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে। পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাটির গল্প ও চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি।

সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছে কাজল নামের ১০ বছর বয়সী এক বালককে ঘিরে। মা ও অসুস্থ দাদিকে নিয়ে কাজলদের সংসার। দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ কাজলের বাবা হঠাৎ একদিন আগন্তুকের মতো পরিবারে ফিরে আসে। এরপর সেই সংসারের টানাপোড়েন আর দ্বন্দ্ব তুলে আনা হয়েছে সিনেমায়।

২০১৯ সালে কোভিডের আগে সিনেমাটির ধারণা বিপ্লবের মাথায় আসে। তখন গল্পটি লিখে ফেলেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পেয়ে সিনেমাটির দৃশ্যধারণে হাত দেন বিপ্লব।


গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিপ্লব বলেন, ‘আমরা সব সময় পৃথিবীতে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে থাকি। মাঝে কাজের জন্য একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সেটা অনুভব করতে পারি না। মহামারির মধ্যে গৃহবন্দী অবস্থায় আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। মহামারি সেই বিচ্ছিন্নতা আরও গভীরভাবে ভাবিয়েছে। চরিত্রগুলো নির্মাণে তাড়িত করেছে।’

তবে এটি মহামারির গল্প নয়, সময়ের ঊর্ধ্বের এক গল্প—বলেছেন বিপ্লব। যেটি ৫ বছর আগের গল্প হতে পারে, ২০ বছর আগেরও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মানবসমাজের কিছু সংকট শাশ্বত। সংসারে নানা সংকট থাকবে; সেই সংকটগুলো তুলে এনেছি।’


সরকারি অনুদান পেলেও সেই অর্থে সিনেমা নির্মাণ করা কঠিন। প্রযোজনায় এগিয়ে আসেন রম্য রহিম চৌধুরী, তাজুল হক; সঙ্গে বিপ্লব সরকারও রয়েছেন। সীমিত বাজেটে ৮০ মিনিটের সিনেমাটি নির্মাণ করতে হয়েছে তাঁকে। সিনেমার বেশির ভাগ শিল্পী ছিলেন অপেশাদার। বিপ্লব বলেন, ‘আরোপিত অভিনয় বাদে সাবলীলভাবে গল্পটা বলতে চাইছি। সচেতনভাবে গল্পে খুব বেশি উত্থান–পতন ছিল না।’

২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিলে নাটোরের লালপুরে, মানিকগঞ্জ ও নবাবগঞ্জে সিনেমার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার, সাহানা রহমান সুমি, রতন দেব, মাহমুদ আলম, এহান, রাফসান, হৃদয়, হাসিমুন, নাঈমা তাসনিমসহ অনেকে।


নির্মাণ-পরবর্তী কাজ মুম্বাইয়ে
সিনেমার নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে গত বছরের শেষভাগে ভারতের গোয়ায় ভিউয়িং রুমের ফিল্মবাজার রিকমেন্ডস বিভাগ থেকে প্রসাদ ল্যাব ডিআই অ্যাওয়ার্ড ও মুভিবাফ অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড জেতে ‘আগন্তুক’। মুম্বাইয়ের প্রসাদ ল্যাবে সিনেমার পোস্ট–প্রোডাকশনের কাজ হয়েছে।

সিনেমার শব্দ পরিকল্পনা করেন কলকাতার প্রখ্যাত শব্দ পরিকল্পক ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাউন্ড ডিপার্টমেন্টের প্রধান সুকান্ত মজুমদার। বিপ্লব সরকারের পাশাপাশি সম্পাদনায় ছিলেন কলকাতার প্রখ্যাত সম্পাদক শঙ্খ।


বুসানে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নির্মাণ শেষ, এবার দর্শকের সামনে আসার পালা। বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আগন্তুক’-এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে। আগামী ৪ থেকে ১৩ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে এ উৎসব হবে। উৎসবে যোগ দিতে ৩ অক্টোবর বুসানে যাবেন নির্মাতা ও প্রযোজক। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয়বারের মতো কোনো বাংলাদেশি চলচ্চিত্র বুসানের প্রধান প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা পেল। এর আগে প্রথম সিনেমা হিসেবে বুসানে প্রধান প্রতিযোগিতা বিভাগে ছিল ‘জালালের গল্প’।

সিনেমাটি নিয়ে বুসানের পর বিশ্বের অন্যান্য উৎসবে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে বিপ্লবের। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিবেশকদের মাধ্যমে ছবিটি বিশ্বের নানা প্রান্তে নিয়ে যেতে চান তিনি।

বাংলাদেশে মুক্তি দেবেন কবে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব বলেন, ‘বড় পর্দার কথা চিন্তা করে আমরা সিনেমা বানাই। অবশ্যই দেশের সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে। এটা আমাদের পরিবেশক ও সিনেমা পলিসির বাধা কাটানোর ওপর নির্ভর করছে।’


বিপ্লবের নির্মাণযাত্রা
ঢাকাই সিনেমার সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন মাদারীপুরের শিবচরের ছেলে বিপ্লব। পড়াশোনার জন্য ২০০০ সালের মাঝামাঝি ঢাকায় আসেন তিনি। তাঁর নির্মাতা হওয়ার কোনো স্বপ্ন ছিল না। হঠাৎ করে জড়িয়ে পড়েন নির্মাণে।

বিপ্লব জানান, ২০১০ সালে স্নাতক শেষ করে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে সিনেমা প্রযোজনা নিয়ে একটি কোর্সে ভর্তি হন তিনি। সেখানে মানজারে হাসীন মুরাদ, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। মূলত সেখান থেকেই নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বিপ্লব। কোর্স শেষে ‘দ্য ফ্লাইং ডগ’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিপ্লব।

২০১৩ সালে অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’ সিনেমার প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে নিজেকে শাণিত করেছেন বিপ্লব। মাঝে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রযোজক হিসেবে চাকরিও করেছেন। চাকরির পাশাপাশি টুকটাক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।

২০১৯ সালে বিপ্লব সরকারের স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইজ এলসহোয়্যার’ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৫তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবে তারেক শাহরিয়ার বেস্ট ইনডিপেনডেন্ট শর্ট পুরস্কার জিতে নেয়।