ধরলার ভাঙনে কুড়িগ্রামে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক পরিবার, হুমকিতে পাঁচশতাধিক পরিবার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৭ জুলাই ২০২৫ ০২:২১ অপরাহ্ণ   |   ৩৩ বার পঠিত
ধরলার ভাঙনে কুড়িগ্রামে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক পরিবার, হুমকিতে পাঁচশতাধিক পরিবার

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙনে ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরক মন্ডল এলাকায় অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়িসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধরলার ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আগাম ঘর-বাড়ি অন্য এলাকায় সরিয়ে নিচ্ছেন। ওই এলাকায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবনসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর, ভিটেমাটি এবং শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ধরলার ভাঙন রোধে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেকসই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
 

শেষ সম্বল ঘর-বাড়ি ও ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় চরম দুর্দিন পার করছেন চরগোরকমন্ডল গ্রামের বাসিন্দা করিম (৬০)। ধরলার তীব্র ভাঙনে নদী তার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। তাই আগ্রাসী ধরলার ভাঙন থেকে ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে ইতোমধ্যে অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু বাড়ি-ঘর নতুন জায়গায় নতুন করে তোলার টাকার অভাবে করিম সহ অনেকে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
 

করিম জানান, "কি কই বাহে, ৬০ বছর বয়সে কমপক্ষে চার-পাঁচ বার বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাড়ি-ঘর জমিজমা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। আমার নিজস্ব জমি না থাকায় গত চার বছর ধরে মানুষের জমিতে ঘরবাড়ি করে স্ত্রীসহ অতিকষ্টে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ধরলার তীব্র ভাঙন একেবারে বাড়ির কাছেই চলে এসেছে। এখন আমার শ্যালকের জমিতে বসবাস করার জন্য ঘরবাড়ি সরানোর কাজ শুরু করেছি, কিন্তু টাকার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।" তিনি আনন্দ বাজারে একটি ছোট সুতা ও রশির দোকান করে কোনো রকমে জীবন-যাপন করছেন।
 

একই এলাকার জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম জানান, "নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে আমাদের বাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব ২০ গজ। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরলার ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।"
 

স্থানীয়রা জানান, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবনসহ চরগোরকমন্ডলের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে।
 

চর গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, গত বর্ষায় ধরলার তীব্র ভাঙনে ৩০টি পরিবার ও আধা কিলোমিটার সড়কসহ শত শত ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সে সময় কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ৫ থেকে ৬ হাজার জিওব্যাগ দেওয়া হলেও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। তিনি আরও জানান, বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রাসা সহ ওই এলাকার ৫০০ পরিবার। বর্ষার আগে ধরলার ভাঙন রোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
 

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, "আমি ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। দুই এক দিনের মধ্যে ভাঙন রোধের জন্য কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে আবেদন জানানো হবে।"
 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, "চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর ভাঙন ঠেকাতে গত বছর ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। আপাতত আমাদের কাছে এই মুহূর্তে জিওব্যাগ নেই। চরগোরকমন্ডলে প্রচুর পরিমাণে জিওব্যাগ লাগবে। জিওব্যাগের বরাদ্দ আসলেই সেখানে জিওব্যাগ দেওয়া হবে।"