প্রকাশকালঃ
৩০ মার্চ ২০২৪ ০৩:০২ অপরাহ্ণ ১৮২ বার পঠিত
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম জনসাধারণের নাগালে আনতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। নির্ধারণ করে দেয় ২৯ ভোগ্য পণ্যের দাম। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া এ দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, তদারকির অভাবে সরকারের দাম কার্যকর হয়নি. বাজার নজরদারির ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, তা চিহ্নিত করে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
জানা গেছে, সরকারের তদারকি সংস্থাগুলো নানা সময় মাঠ পর্যায়ে কিছু অভিযান ও জরিমানা করে। কিন্তু সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বাজার পরিদর্শন করে বের হয়ে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় বাজারের চিত্র। ফলে গত ১৫ মার্চ সরকার ২৯ পণ্যের দর নির্ধারণ করে দিলেও গত ১৪ দিনে সরকারি দামে পণ্য মিলছে না বাজারে।
প্রকৃত অর্থে সরকারের বার্তা আমলে নেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খাসির মাংসের কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার তিন টাকা ৫৯ পয়সা।
অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির উৎপাদক মূল্য ধরা হয় ১৫১.৮১ টাকা, পাইকারি মূল্য ১৬২.৬৯ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৭৫.৩০। মাঝে দু-এক দিন ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ২০০ টাকায় নামলেও এখন আবার বেড়ে ২৩০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি পিস ডিম খামার পর্যায়ে ৯.০৫ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৯.৬১ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১০.৪৯ নির্ধারণ করা হয়। বাজারে এখন একমাত্র ফার্মের ডিম মিলছে নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা কমে, প্রতি পিস ১০ টাকা এবং হালি মিলছে ৪০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের কেজি গত এক সপ্তাহে দুই টাকা বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা। গত ১৫ মার্চ সরকার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদক মূল্য ৪৪.৩০ টাকা, পাইকারি মূল্য ৫৩.২০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬৫.৪০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।
দাম বেঁধে দেওয়ার পর দুই দিনের মতো পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় নেমেছিল, কিন্তু এখন আবার দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর ফকিরাপুল বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মঈনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত মাসের তুলনায় কিছুটা কম হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কেউ মানছে না। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সব ধরনের পণ্য আনতে হলে অবশ্যই বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। সরকার যেন দাম বেঁধে দিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করেছে।
এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে না পারার কারণ সম্পর্কে শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কিনতেই পারছি না। বিক্রি করব কেমনে? বাজারের মালের ঘাটতি আছে। তাই দাম বেশি। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ভোক্তার চেয়ারম্যান ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। ব্যবসায়ীরা আমদানি ব্যয় ও উৎপদন খরচ বেড়েছে বলে খোঁড়া যুক্তি তুলে ধরেন।
প্রকৃতপক্ষে দাম যতটা বাড়ে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মূল্য বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেন। বাজার স্থিতিশীল রাখার যে আশ্বাস দিয়েছে সরকার, দিনশেষে সেটা কার্যকর করা যায়নি। কারণ বাজার নজরদারির যে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা এবং সেখানে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্মিলিতভাবে কাজ করার চেষ্টা করছে। ফলে ভোগ্য পণ্যের উৎপাদক পর্যায়ের অঞ্চলগুলোতে দাম সহনীয় থাকলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে সরবরাহব্যবস্থার ত্রুটির কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিমুনাফা করেন। এ বিষয়গুলোতে সরকার ও নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং নেবে। আশা করছি, শিগগিরই ভোক্তারা এর সুফল পাবে।