|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০১ আগu ২০২৫ ০১:৩৯ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ৩০ জুলাই ২০২৫ ১২:১৪ অপরাহ্ণ

উন্নয়ন হোক গাছকে বাঁচিয়ে, ধ্বংস করে নয়- আতাউর রহমান 


উন্নয়ন হোক গাছকে বাঁচিয়ে, ধ্বংস করে নয়- আতাউর রহমান 


মো: কাউছার পাটোওয়ারী,স্টাফ রিপোর্টার:-

 

রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বর্তমান পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে কথা বলেন,বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের ধারায় মানুষের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণের মতো কার্যক্রম।


এই উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য সবচেয়ে সহজ শিকার হয়ে উঠছে গাছ ও বনাঞ্চল। উন্নয়নের কারণে গাছ কাটতেই হবে, এটিই যেন এ দেশের নিয়ম হয়ে গেছে। গাছ না কেটে বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে কীভাবে উন্নয়ন করতে হবে, সেই বিবেচনাবোধ কখন আমাদের নীতিনির্ধারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ করবে, আমাদের বোধগম্য নয়। একদিকে উন্নয়নের স্বার্থে গাছ কাটা হচ্ছে, অন্যদিকে তার বিপরীতে প্রশ্ন উঠছে- এটি কি সত্যিকারের উন্নয়ন, নাকি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত? উন্নয়ন বলতে মূলত আমরা কী বুঝি? উন্নয়ন হলো কোনো ব্যক্তি, সমাজ, জাতি বা রাষ্ট্রের আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, অবকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রে সামগ্রিক অগ্রগতি বা পরিবর্তন, যা মানুষকে একটি উন্নত, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও সচ্ছল জীবনযাপনের সুযোগ দেয়।


একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য নতুন রাস্তা, সেতু, শিল্প এলাকা, আবাসিক ভবন নির্মাণ জরুরি। এসব কার্যক্রমের জন্য কিছু গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তা অনেক সময় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ, নগরায়ণের বিস্তার এবং কৃষিজমির প্রয়োজনের কারণে বনভূমি উজাড় করে উন্নয়নকাজ পরিচালিত হচ্ছে। সরকার ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি হয়, যোগাযোগ সহজ হয় এবং অর্থনীতি সচল হয়।

 

তবে উন্নয়নের এই একমুখী চিন্তা দীর্ঘ মেয়াদে যে ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাছ কাটা মানে শুধু একটি গাছ ধ্বংস নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করা। বর্তমানে আমাদের দেশসহ গোটা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা, যার প্রভাবে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী দাবদাহ। সুতারং গাছ কাটলে তার দ্বিগুণ অনুপাতে গাছ লাগাতে হবে।
 

জলবায়ু পরিবর্তন : গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছ কেটে ফেলার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে, ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 

যার কারণে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, হিটস্ট্রোকের মতো রোগ বেড়ে যায়।
 

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন টেকসই উন্নয়ন, যেখানে উন্নয়ন হবে, তবে পরিবেশকে ধ্বংস না করে। গাছ শুধু লাগালেই হবে না- সঠিক স্থান, সময়, আবহাওয়া, মাটির ধরন, আশপাশের পরিবেশ ও বসতির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গাছ নির্বাচন করাটাও অত্যন্ত জরুরি। আবার শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়, এর সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন।
 

গাছ কেটে উন্নয়ন হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেয়, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর ফল ভয়াবহ হতে পারে। প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না। বরং সেই উন্নয়ন একসময় মানবজাতির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। তাই এখনই সময় গাছ, বন ও পরিবেশ রক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের পথ বেছে নেওয়ার। কারণ প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ বাঁচবে, আর মানুষ বাঁচলেই টিকবে উন্নয়ন।
 

উন্নয়ন হোক গাছকে বাঁচিয়ে, ধ্বংস করে নয়।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫