খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও উন্নয়ন অনিয়মের তদন্তে দুদক

খুলনা প্রতিনিধি:-
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত বছরের ২০ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন পদত্যাগ করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিয়োগ, পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। এই প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রমের অনিয়মও তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক সাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের ২৫ মে অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন। তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।
গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, এসব নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের নির্দেশে দলীয় কর্মী ও তাদের স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারাও অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন পেয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মুজিবুর রহমানকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সঞ্জয় সাহাসহ অন্তত ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রকৌশলী অনিয়মের মাধ্যমে আপগ্রেডেশন পান। দুদক এসব নিয়োগ ও পদোন্নতির নথি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে এবং অচিরেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হবে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৌশল শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বিশেষ করে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড সন্স কীভাবে কাজ পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে চার শতাধিক নিয়োগ সম্পন্ন হয়, যার বেশিরভাগই অনিয়মের অভিযোগে বিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তেও নিয়োগ অনিয়ম ধরা পড়ে। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্ত কমিটিও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের ভবন নির্মাণে অনিয়ম পায়। এই বিষয়ে বহু সংবাদ প্রকাশিত হলেও অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামানকে বাদ দিয়ে মাত্র তিন বছর দায়িত্ব পালন করা উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
দুদক খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি দুদক অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের সময়কার অনিয়ম অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়। তদন্তে অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামানের অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে তা কমিশনে জানানো হবে।
এ বিষয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন বলেন, "ইচ্ছেমতো কাউকে নিয়োগ বা পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিয়োগে কমিটি ছিল, তারা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।"
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫