ঢাকা প্রেস নিউজ
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আয়োজকরা লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা করেছেন। তবে দলের নাম ও সাংগঠনিক কাঠামো এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা গতকাল সোমবার রাজধানীর বাংলামটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
আখতার হোসেন জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হবে। আলোচনার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে এবং ভবিষ্যতে দলের কাউন্সিলে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবেন।
দলের নেতৃত্ব নিয়ে মতানৈক্য সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হান্নান মাসউদ দলের আত্মপ্রকাশের পটভূমি তুলে ধরেন, এরপর আরিফ সোহেল বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং সারজিস আলম চূড়ান্ত সময় ঘোষণা করেন। তবে দলের শীর্ষ পদ নিয়ে কিছু মতানৈক্য রয়ে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ও যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত অনুপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ পদ নিয়ে ভিন্নমত থাকায় তাদের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্কের মধ্যে নাহিদ ইসলামের পরিবর্তে মাহফুজ আলমকে দলের প্রধান করার প্রস্তাব উঠলেও তা গৃহীত হয়নি। অধিকাংশ নেতাই নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বের পক্ষে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি শিগগির দলের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা ও অন্তর্ভুক্তি আত্মপ্রকাশের দিন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। এতে আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখ্য সংগঠক, মুখপাত্র, যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এখন পর্যন্ত কাউকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। বিরোধে থাকা সবাই দলে স্থান পাবেন বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেন শীর্ষ নেতৃত্বে থাকবেন। এছাড়া হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। অন্যান্য পদে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সারোয়ার তুষার, আরিফুল ইসলাম আদীব, ডা. তাসনীম জারা, আলী আহসান জুনায়েদ, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, মনিরা শারমীন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজসহ অনেকে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
দলের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটেছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতা ঔপনিবেশিক শাসনের ধারাবাহিকতা দেখতে চায় না।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, প্রবাসী আন্দোলনকারীরা উপস্থিত থাকবেন।
জনমত জরিপ ও জনগণের প্রত্যাশা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি জনমত জরিপ পরিচালনা করেছে। অনলাইনে দুই লক্ষাধিক এবং অফলাইনে ৫০ হাজার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন। জরিপের মাধ্যমে দলীয় নীতি, কাঠামো ও প্রতীক নিয়ে মতামত নেওয়া হয়েছে।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, জনগণের মতামত অনুযায়ী নতুন দল দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের অঙ্গীকার করবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নেতৃত্ব নির্বাচনে সততা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও পরিবারতন্ত্রবিরোধী অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে জনমতে জোর দেওয়া হয়েছে। দল অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা, তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তরুণদের নেতৃত্বে নতুন দল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবে।
এই দল ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা থেকে গঠিত হচ্ছে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে। ২৮ ফেব্রুয়ারির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে নতুন এক রাজনৈতিক ধারার সূচনা হতে চলেছে।