|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:১০ অপরাহ্ণ

ব্যাংকিং খাতে আশার আলো: পর্ষদ পুনর্গঠনে কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে


ব্যাংকিং খাতে আশার আলো: পর্ষদ পুনর্গঠনে কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে


ঢাকা প্রেস নিউজ

 

নানামুখী সংকটের মাঝেও ব্যাংকিং খাত কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। অতীতের অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া কয়েকটি ব্যাংক ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রিজার্ভ সুরক্ষা এবং আমদানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশ কিছুতে আমানত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা, রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ সুশাসন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যাংকিং খাতের পুনরুদ্ধারের পথে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
 

বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর আতঙ্কের কারণে ব্যাপক টাকা উত্তোলনের চাপ তৈরি হয়েছিল। সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত নভেম্বর মাসে ৬টি ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা প্রদান করেছিল। যদিও অনেকেই এ পদক্ষেপকে সমালোচনার চোখে দেখেছিল, তবে গভর্নর জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলোকে আরও সহায়তা দেওয়া হবে। এর ফলে বেশিরভাগ ব্যাংকে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে এবং টাকা উত্তোলনের চাপ কমেছে। এই কারণে নতুন করে টাকা ছাপিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
 

পুনর্গঠন হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ সবচেয়ে চিন্তার বিষয় ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল। তবে ব্যাংকটি বর্তমানে অনেক আমানত পাওয়ার কারণে আবার ঋণ বিতরণ শুরু করেছে বলে সম্প্রতি জানান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। পুনর্গঠন হওয়া অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে এসআইবিএল এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ উত্তোলনের চেয়ে বেশি হচ্ছে।
 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যা দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণ, ফরেনসিক নিরীক্ষা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে।
 

এসব উদ্যোগের ফলে কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ১২টি ব্যাংকের মধ্যে ইউসিবি অন্যতম, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রণোদনা সহায়তা ছাড়াই শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। ইউসিবি সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দেড় মাসে ব্যাংকটির সব শাখা, উপশাখা, এজেন্ট আউটলেট ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এক লাখেরও বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এতে ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে মানুষ আবার ব্যাংকিং সিস্টেমে আস্থা ফিরে পেয়েছে, এবং এর ফলস্বরূপ আমানত ও ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
 

এছাড়া, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটি বড় কোনো অর্থায়ন না করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় ঋণ প্রদান করেছে। এর ফলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, যদিও হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায় এখনও তাদেরকে বহন করতে হচ্ছে।
 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, সংস্কার উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং খাত দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল, সেগুলোও এখন পুনরুদ্ধার হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫