বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের ক্ষেত্রে যেন অপরাধী ব্যক্তি কোনো অপূরণীয় ক্ষতির জন্য সহজে ছাড়া না পেয়ে যান, সে লক্ষ্যেই এই সীমারেখা নির্ধারণ করা হচ্ছে। "ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার ক্ষেত্রে একটি কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন—এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে," বলেন তাহের।
তিনি জানান, এখন থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের আগে একটি সুপারিশ কমিটির মতামত নিতে হবে। এ কমিটি নির্ধারিত কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে সুপারিশ করবে। ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি হত্যার মতো ব্যক্তিগত অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে ক্ষমা করা যাবে না। এই বিষয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলে অন্য দলগুলোও তাতে সম্মতি দেয়।
তাহের বলেন, "কেউ যদি ব্যক্তিগত অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হন—যেমন, কাউকে হত্যা করে থাকেন—তাহলে রাষ্ট্রপতি বা কমিটি এককভাবে তাঁকে ক্ষমা করতে পারবেন না। সেখানে ভুক্তভোগী পরিবার ও আইনগত উত্তরাধিকারীদের সম্মতি আবশ্যক। এতে বিচারব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।"
এদিনের আলোচনায় উচ্চ আদালতের বিচার বিভাগীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ নিয়েও ঐকমত্য গড়ে ওঠে। তাহের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় থাকবে, তবে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় শহরগুলোতেও প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে সব রাজনৈতিক দল।
তিনি বলেন, “২০ কোটি মানুষের দেশে সবার পক্ষে ঢাকায় এসে বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। সময় ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।” তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তিনি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতি ও আইনজীবী নিয়োগ এবং তাঁদের অঞ্চলভিত্তিক প্র্যাকটিসে আগ্রহী করে তোলা।
তাহের বলেন, “এখন হয়তো বিচারপতি ও দক্ষ আইনজীবীর ঘাটতি আছে। কিন্তু আমরা যদি পরিকল্পিতভাবে পাঁচগুণ বাজেট বাড়িয়ে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেই, তাহলে এই ঘাটতি দূর করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক দক্ষ আইনজীবী আছেন যারা ঢাকায় প্র্যাকটিস করেন। আদালত ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে তারা নিজ নিজ এলাকায় প্র্যাকটিস করতে আগ্রহী হবেন।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আগে যেমন ডাক্তাররা গ্রামে যেতে চাইতেন না, এখন সরকার ব্যবস্থা করায় যাচ্ছেন। তেমনি বিচারপতি ও আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে এমন পরিবর্তন সম্ভব।”
এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, “আমরা সার্কিট বেঞ্চ নয়, স্থায়ী বেঞ্চ চাচ্ছি। এজন্য সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে এবং এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি।”