|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:২২ অপরাহ্ণ

থমথমে গোয়ালন্দ: অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গ্রেপ্তার ৫


থমথমে গোয়ালন্দ: অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গ্রেপ্তার ৫


গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি:-


 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে ভয়াবহ হামলার পর রবিবারও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দরবার শরীফ ও আশপাশের ঘরবাড়িতে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। নিরাপত্তার জন্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন আছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
 

শনিবার রাতেই এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
 

নিহত রাসেল মোল্লার বাড়িতে আহাজারি

হামলায় প্রাণ হারানো মো. রাসেল মোল্লা (২৮) ছিলেন দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে। তিনি মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজে গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করতেন। দুই সন্তানের জনক রাসেল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
 

শনিবার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদেহ তখনও পৌঁছেনি, তবে স্বজনরা আহাজারি করতে করতে ভিড় জমাচ্ছেন। রাসেলের ছোট মেয়ে ইয়াসমিন (৫) মৃতদেহ আনার খাটিয়া দেখে দাদুকে জিজ্ঞেস করছিল—“দাদু, এটা দিয়ে কি হবে?” কেউ উত্তর দিল, “এখানে তোমার আব্বুকে শোয়ানো হবে।” শিশু ইয়াসমিন তখন বলছিল, “তাহলে ঘর থেকে বালিশ এনে দাও, আব্বু এখানে শুবে।” এই কথায় শোকের মাতম আরও বেড়ে যায়।
 

রাসেলের বাবা আজাদ মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে কার কী ক্ষতি করেছিল যে তাকে এভাবে হত্যা করতে হলো? সে তো শুধু কোম্পানির গাড়ি চালায়। শুক্রবার দরবার শরীফে গিয়েছিল, তাতেই বা কার কী ক্ষতি হয়েছিল?”
 

হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা তিনটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কথিত ‘তৌহিদী জনতা’ দফায় দফায় দরবার শরীফে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ১৩ দিন আগে সমাহিত নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে এনে এক কিলোমিটার দূরে পদ্মার মোড়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং পরে দেহাবশেষ পদ্মা নদীতে নিক্ষেপ করে।
 

এ হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য ও প্রশাসনের দুই কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি। হামলার শিকার হয়ে মারা যান রাসেল মোল্লা।
 

মামলা ও গ্রেপ্তার

গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এর পরপরই শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
 

গোয়ালন্দ থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম জানান, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হবে। তবে এখনো নুরাল পাগলার পরিবার কিংবা নিহত রাসেলের পরিবার থেকে কোনো মামলা করা হয়নি।
 

সরেজমিন চিত্র

রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দরবার শরীফের ভেতরের একতলা টিনের ঘরগুলো আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তিনতলা ও দোতলা ভবনের প্রতিটি কক্ষে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের চিহ্ন স্পষ্ট। পুরো দরবার এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫