ঢাকা প্রেস নিউজ
দেশজুড়ে আমনসহ বিভিন্ন জাতের নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। একই সময় শুল্ককর প্রত্যাহারের সরকারি ঘোষণার পর শুল্কমুক্ত চাল আমদানি হয়েছে। তবে, এসবের পরও আমন মৌসুমেই চালের দাম বাড়ছে! অস্থির বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে, যা প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এছাড়া সাতক্ষীরা ভোমরা, যশোর বেনাপোল এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে, সরকারিভাবে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। কৃষকরা জানাচ্ছেন, সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাল আড়তদার এবং ব্যবসায়ীরা বর্তমান সরকারের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন, অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা উৎপাদন কম হওয়ার কথা বলছেন। আমন মৌসুমে এমন দাম বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা এই পরিস্থিতিকে রহস্যজনক মনে করছেন।
দেশের বিভিন্ন মোকাম এবং স্থলবন্দর থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম এবং সাতক্ষীরায় প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে।
দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এক সপ্তাহে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৪-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৭২-৭৪ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫০ থেকে বেড়ে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি সিদ্ধ এবং নাজিরশাইলও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুল্কমুক্ত চাল আমদানি হলেও বাজারে ভারতীয় চালের প্রভাব তেমন পড়েনি, ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। যশোরের বেনাপোল থেকে ২৫ দিনে ৩,৩২০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি।
কুষ্টিয়ার বাজারে গত এক সপ্তাহে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪ টাকার মতো বেড়েছে। মিনিকেট চালের দাম ৭০ টাকা থেকে ৭৪ টাকা, বাসমতি ৯২ টাকা এবং আঠাশ চালের দাম বেড়ে ৫৮ টাকা হয়েছে। খাজানগর মিলগেটে চালের দাম এক সপ্তাহে দুই দফায় বেড়েছে।
চট্টগ্রামে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে।
ঢাকায়, শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, হাতিরপুল এবং কারওয়ান বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনিকেট চালের দাম ৭২ থেকে ৮০ টাকা, আটাশ চাল ৫৫-৬০ টাকা, পুরাতন আটাশ ৬০-৬৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৬-৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কুষ্টিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরকারি গুদামে ধান-চাল দেয়ার আগ্রহ কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধান প্রতি কেজিতে সরকার নির্ধারিত ৪৭ টাকায় সংগ্রহ করা হলেও খরচ ৫২ টাকা হওয়ায় ৫ টাকা ঘাটতি হবে।
এদিকে, কুষ্টিয়ার খাজানগরের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে কিছু ব্যবসায়ী মিনিকেট চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। তারা সিন্ডিকেট করে দফায় দফায় চালের দাম বাড়াচ্ছেন, যা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।