ভেঙ্গে গড়তে চান নিজেকে মিরাজ

প্রকাশকালঃ ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৩:১১ অপরাহ্ণ ৩৫৪ বার পঠিত
ভেঙ্গে গড়তে চান নিজেকে মিরাজ

ওরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, ইংল্যান্ড। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে যদি কোনো দেশ ধুয়ে দেয়, তিন ম্যাচ সিরিজের তিনটিতেই যদি হারিয়ে দেয়, তাহলে সেই দেশের খেলোয়াড়দের নায়ক না বলে উপায় কী। সাকিব, মিরাজ, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজ, লিটন, শান্তরা এখন ইংল্যান্ডের সামনে মহানায়ক। ওদের উঁচু নাকে আঘাত করেছেন সাকিবরা। মিরপুর মাঠে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সিরিজ জয়ের রাতে সাকিবকে উঁচুতে রেখে কথা বলছিলেন। সাকিবের মতো কেউ নেই।’ আর মেহেদী হাসান মিরাজ বলছেন, তিনি সাকিব আল হাসানের মতো অলরাউন্ডার হতে চান। আরেক জন সাকিব হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে তিনিও ২২ গজে লড়াই করে যাচ্ছেন। নিজেকে একদিন সাকিবের মতো বিশ্ব-সেরা অলরাউন্ডারের জায়গায় দেখার ছবি আঁকছেন মিরাজ। 

 

গতকাল মিরাজ একটি প্রতিষ্ঠানের দূত হয়ে কাজ শুরু করেছেন। মিরাজের নতুন চলার পথে আবার তার স্বপ্ন নিয়েই কথা উঠল। জানালেন সাকিব হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। বিশ্বাস রাখতে চান নিজের ওপর। মিরাজ বললেন, ‘বিশ্বাস না রাখলে তো আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন না। নিজের ওপর আস্থার জায়গাটা রাখতে হবে। লড়াই করতে হবে। সাকিব ভাই এক দিনে গড়ে ওঠেননি। আমি যদি সাকিব হতে চাই আমাকেও সেই প্রস্তুতি নিয়ে লড়াই করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস না করলে এগিয়ে যেতে পারব না।’   

সাকিব দলের অলরাউন্ডার। সাকিবের মতো খেলোয়াড় দলে থাকা মানে সেই দলের জন্য বড় একটা শক্তি। মিরাজ বললেন, ‘দলে অলরাউন্ডার যত থাকবে, শক্তিটাও তবে বেশি হবে। উনি শুধু নিজে খেলেন না। অন্যদের কাছ থেকেও খেলা আদায় করতে অনেক ভাবে কাজ করেন। টিম যখন মাঠে নামে তখন একটা সমন্বয়ের দরকার হয়। সাকিব ভাই সেটাও করেন। সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এখন, তাকে দেখেই আমরা উজ্জীবিত হই। যখন আমরা আমাদের দলে বিশ্বমানের খেলোয়াড়কে দেখি, আমাদের শক্তিটাও বেড়ে যায়। এমন একজন আইডল খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলে কে না চাইবে আইডল খেলোয়াড় হতে।’

 

ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড় যত বেশি থাকবে তত বেশি সুযোগও থাকবে ম্যাচ জয়ের। এমন বিশ্বাস মিরাজের। ‘আমরা যদি বিশ্বাস করি আমাদের দলে একজন ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার আছে সেখানে আস্থা জোগায়। আমরা  বিশ্বাস করি দলে একজন ক্রিকেটার আছে, সে-ই পারে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে। আবার এটাও ঠিক যে, সব সময় জেতাতে পারবে না। সেই সঙ্গে এখন বলতে পারি আমাদের দলটাকে এখন যে কোনো দিন যে কেউ জয় এনে দিতে পারবে—বললেন মিরাজ। আর নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে মিরাজ বললেন, ‘অবশ্যই নিজের কাছে ভালো লাগছে, যেহেতু ব্যাটিং ভালো হচ্ছে। চেষ্টা করব ব্যাটিং-বোলিংয়ে আরো উন্নতি করার।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাট করতে হয়নি মিরাজকে। ভালো বল করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের জয়ে মিরাজের অবদান ছিল। বিশেষ করে যখন ইংলিশ অধিনায়ক ক্রিকেটার জস বাটলারকে সরাসরি থ্রোয়ে ৪০ রানে রানআউট করেন মিরাজ। সেই রাতে খেলার পর ইংল্যান্ডের কোচ ম্যাথু মট মিরাজের ব্যাপারে বলছিলেন, ঐ একটা আউটই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। সেই প্রসঙ্গটা টানলে মিরাজ বললেন, ‘এটা কারো একার কৃতিত্ব না। টিমওয়ার্ক। সবার অবদান। 

 

মিরাজ বলেন, ‘তখন প্রতিটা মোমেন্টামই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হ্যাঁ এটা ঠিক যে, রানআউট ম্যাচের রং বদলে দেয়। এটা আমরা সবসময় দেখি। একটা মোমেন্টাম চলে আসে। আমার মনে হয় এই ম্যাচে প্রত্যেকটা জায়গায় আমাদের মোমেন্টাম ছিল। বিশেষ করে ওপেনাররা যখন শুরুর দিকে রান করেছে, ঐ উইকেটে হয়তো শুরুর দিকে রান করা সহজ ছিল না। পরে মোস্তাফিজের ব্রেক থ্রুরু সেট ব্যাটসম্যানকে আউট করে দিয়েছিল। তারপর আবার হাসান মাহমুদ বল করেছে, তাসকিন বল করেছে। সবমিলিয়ে আমি মনে করি শেষ ম্যাচটা দল পুরোপুরি টিমওয়ার্ক। সবাই অবদান রেখেছে। এজন্য আমরা ম্যাচ জিতেছি। 

ওয়ানডে প্রসঙ্গে মিরাজ বললেন, ‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা সিরিজটা হেরেছিলাম। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচের খুব কাছে গিয়ে হেরেছিলাম। আরেকটা ম্যাচ জিততে পারলে সিরিজ জিততাম। ওয়ানডেতে কিছু জায়গায় ঘাটতি ছিল, চেষ্টা করেছি সেগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন টি-টোয়েন্টিতে না হয়। আমরা ইংল্যান্ডকে নিয়ে ভালোমতো পরিকল্পনা করেছিলাম। কোন জায়গায় কীভাবে বোলিং করব, কোন ব্যাটসম্যানকে কীভাবে বল করব। ব্যাটাররাও পরিকল্পনা করেছিল যে, কোন বোলারকে কীভাবে খেলবে। সবাই পরিকল্পনা করেছি। অনেক সময় পরিকল্পনা সফল হয়, অনেক সময় হয় না।’

 

ওয়ানডেতে পরিকল্পনায় কী ভুল ছিল। মিরাজ বললেন, ‘আমরা মানুষ তো, ভুল তো হবেই। টি-টোয়েন্টিতে যখন এসেছি, তখন ওয়ানডের ভুলগুলো নিয়ে বেশি কাজ করেছি। বাস্তবায়ন ভালো হয়েছে। সে কারণেই টি-টোয়েন্টিতে সফল বলতে পারছেন।’

এই পথচলা কতোখানি টিকে থাকবে। মিরাজ বললেন, ‘চলতে গেলে পথে হোঁচট খাবেন। সব সময় পরিকল্পনা করেও কাজ হয় না। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই একটা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন। অবশ্যই উন্নতির শেষ নেই,  প্রতিদিন উন্নতি করতে হবে। আমি যদি নিজেকে একটা জায়গায় রাখি, তাহলে কিন্তু আমি ওপরে যেতে পারব না। চ্যালেঞ্জ এটাই, নিজেকে প্রতিনিয়ত বদলাতে হবে এবং উন্নতি করতে হবে।’ নিজেকে ভেঙে গড়তে চান মিরাজ।