গোপালগঞ্জে চারটি হত্যা মামলা, আসামি ৫ হাজার ৪০০

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ   |   ৩১ বার পঠিত
গোপালগঞ্জে চারটি হত্যা মামলা, আসামি ৫ হাজার ৪০০

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:-

 

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চারটি পৃথক হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে দায়ের করা এসব মামলায় মোট ৫ হাজার ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন—দোকান কর্মচারী ইমন তালুকদার, টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজী, ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহা এবং সোহেল রানা মোল্লা।
 

এজাহারে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম উল্লেখ করা হলেও এসব সংগঠন বর্তমানে নিষিদ্ধ বলে দাবি করেছে পুলিশ। নিহত রমজান মুন্সীর মৃত্যুর ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
 

এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় আরও চারটি মামলা দায়ের হয়, যাতে আসামি করা হয় ৩ হাজার ৮ জনকে।
 

গ্রেপ্তার আতঙ্কে গোপালগঞ্জ

ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তারের মুখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ। এখন পর্যন্ত পুলিশ ৩০১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে ১৯ জন শিশু। গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের সোমবার যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামান।
 

গ্রেপ্তারের এই ঢল নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সংঘর্ষে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদেরও ধরা হচ্ছে। অনেক পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, অনেকেই রাতে নিজ বাড়িতে না থেকে অন্যত্র অবস্থান করছেন।
 

চার হত্যাকাণ্ডের মামলা

ঘটনার চার দিন পর অবশেষে পুলিশ চারটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন হওয়া নিহতদের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছিল।
 

সদর থানার এসআই আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে কিশোর রমজান কাজী হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে মাদারীপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে হামলা চালায়। চারটি মামলায় মোট ৫ হাজার ৪০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
 

কারাফটকে স্বজনদের কান্না

গ্রেপ্তারের শিকার শিশু-কিশোরদের পরিবারে এখন শোক আর ক্ষোভ। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মেহেরাব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে। তার বাবা বলেন, “আমার ছেলে একজন শিশু, অস্ত্র নিয়ে মিছিলের অভিযোগ মিথ্যা।”
 

একইভাবে ১৩ ও ১৪ বছরের দুই ভাই মোতালেব ও রাব্বি ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয় নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে।
 

বিএনপির প্রতিবাদ

গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল কোটালীপাড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ও পৌর বিএনপি। তারা দাবি করে, সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, পুলিশ হামলার সময় উপস্থিত থাকলেও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, বরং পরে নিরীহ মানুষদের ধরা হচ্ছে।
 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যাখ্যা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “অপরাধী ছাড়া কেউ যেন ধরা না পড়ে—সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। যারা দোষী, শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”
 

তিনি জানান, গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গুলি ছোড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে সময় যে ব্যবস্থা প্রয়োজন, তা নিতে হয়। কোনো অবস্থায় যেন দুষ্কৃতকারী ছাড়া না পায়।”
 

কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

গোপালগঞ্জে সহিংসতার পর জারি করা কারফিউ ও ১৪৪ ধারা রবিবার সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন। তবে স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। শহরে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
 

সহিংসতা ঠেকাতে প্রশাসনের ব্যর্থতা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে উঠে এসেছে, এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পূর্বাভাস পেলেও স্থানীয় প্রশাসন তা ঠেকাতে প্রস্তুত ছিল না। খুলনা ও বাগেরহাট থেকেও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা এসে হামলায় অংশ নেন বলে দাবি উঠেছে।
 

পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা শটগান দিয়ে ১ হাজার ৮০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৬৭টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে, তবে প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করেনি।