ঢাকা প্রেস নিউজ
বিদেশি মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সরকারের তরফ থেকে বৈদেশিক ভাতা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই নতুন হার কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে, এবং এর অর্থ পরিশোধ করা হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।
বাংলাদেশের ৮২টি বিদেশি মিশন ৬০টি দেশে অবস্থিত। এই মিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন ও ভাতার বাইরে বৈদেশিক ভাতা পেয়ে থাকেন। দেশীয় বেতন-ভাতায় বিদেশের উচ্চ খরচ মেটানো সম্ভব নয়, তাই বৈদেশিক ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বর্তমানে বৈদেশিক ভাতায় সরকারের বার্ষিক ব্যয় প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। নতুন হার কার্যকর হলে এতে আরও ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বা ৩৩ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ব্যয় হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় গত রোববার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তন বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, বৈদেশিক ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা ১০০ শতাংশ এবং শিক্ষা ভাতা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের নীতি অনুসারে শুধুমাত্র বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধি অনুমোদন করা হয়েছে। আপ্যায়ন ও শিক্ষা ভাতা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
বিশ্বের দেশগুলোকে এ, বি এবং সি—তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে ভাতা বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, নেপালের রাষ্ট্রদূত বছরে ৩ হাজার ১৯৩ ডলার (৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা) এবং সর্বনিম্ন স্তরের কর্মচারী ৭২২ ডলার (৮৭ হাজার টাকার বেশি) বৈদেশিক ভাতা পাবেন।
বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধির ফলে সরকারের মোট ব্যয় ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে বছরে আরও ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে। এর বাইরে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বছরে আরও ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, বর্তমান রাজস্ব আদায়ের সংকটময় পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত আগামী বাজেটের সময় নেওয়া যেত। তবে দীর্ঘদিন পর বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধি হওয়ায় এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২০১৮ সালে বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা এতদিন অনুমোদন হয়নি। ২০১৯ সালে শিক্ষা ভাতা একবার বাড়ানো হয়েছিল বলে এটিকে আর সংশোধন করা হয়নি।
নতুন বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত বিদেশি মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি প্রতীক্ষিত ও স্বস্তির খবর।