কোরআনের আবু লাহাবের ধ্বংসের বার্তা

পবিত্র কোরআনের ১১১ নম্বর সুরা লাহাব। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মোট আয়াত পাঁচটি। প্রথম আয়াতের শব্দ থেকে সুরাটির নাম দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর সময়ে মক্কার প্রসিদ্ধ কাফির ছিল আবু লাহাব। সে রাসুল (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের কাজে বাধার প্রাচীর তৈরি করেছিল।
দিয়েছিল ধ্বংস হওয়ার অভিশাপ। এ সুরায় আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর কার্যক্রম ও পরিণতি উল্লেখ করা হয়েছে। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নরূপ :
সুরা লাহাবের শানে নুজুল
মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে ৪০ বছর বয়সে নবুয়তের মর্যাদায় মনোনীত ও সম্মানিত করেন। প্রথম তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য আদিষ্ট ছিলেন না। বেশ কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রকাশ্য দাওয়াত দেওয়ার জন্য নির্দেশ এলো। ‘হে রাসুল! নিকটাত্মীয়দেরও সতর্ক করুন। (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২১৪ )
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আয়াতটি নাজিল হলে রাসুল (সা.) বের হয়ে সাফা পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন এবং ইয়া সাবাহ (সকাল বেলার বিপদ থেকে সাবধান) বলে উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিলেন। আওয়াজ শুনে তারা বলল, এ কে? তারপর সবাই তাঁর কাছে গিয়ে সমবেত হলো। তিনি বলেন, আমি যদি তোমাদের বলি, একটি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী ও পাহাড়ের পেছনে তোমাদের ওপর হামলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে? তাহলে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? সকলে বলল, আপনার মিথ্যা বলার ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই।
তখন তিনি বলেন, আমি তোমাদের আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। একথা শুনে আবু লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এ জন্যই আমাদের একত্র করেছ? অতঃপর রাসুল দাঁড়ালেন। তারপর নাজিল হলো ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। (বুখারি, হাদিস : ৪৬১১)
মহানবী (সা.)-এর মুজিজা প্রকাশ
আবু লাহাবের স্ত্রীর ডাক নাম ছিল উম্মে জামিল। এই নারীর স্বামীর মতো কঠোর ইসলামবিদ্বেষী ছিল। আল্লাহ তাআলা তার স্বামীর ব্যাপারে সুরা নাজিল করে অপমানিত করেছেন শুনে সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। পাথরের আঘাতে রাসুল (সা.)-কে হত্যা চেষ্টা করল। কিন্তু তখন রাসুল (সা.) মুজিজার মাধ্যমে বেঁচে গেলেন।
একটি বর্ণনায় এসেছে, সে রাসুলের খোঁজে বের হয়ে পড়ল। কাবা প্রাঙ্গণে বসা আবু বকর (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি একটু সরে যেতেন তাহলে ভালো হতো, যাতে ওই নারী আপনাকে কষ্ট দিতে না পারে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, হে আবু বকর! আমার ও তার মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হবে। এরই মধ্যে ওই নারী এসে বলল, আবু বকর! তোমার সাথি আমাদের বদনাম করে কবিতা বলেছে? তিনি জবাবে বলেন, কাবার রবের শপথ! তিনি কোনো কবিতা বলেননি এবং তাঁর মুখ দিয়ে তা বেরও হয়নি। তখন সে বলল, তুমি সত্য বলেছ। তারপর সে চলে গেলে আবু বকর (রা.) বলেন, সে কি আপনাকে দেখেনি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই নারী ফিরে যাওয়া পর্যন্ত একজন ফেরেশতা আমাকে আড়াল করে রেখেছিল। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ২৩৫৮, মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ২৯৪)
সুরা লাহাব থেকে শিক্ষা
পবিত্র কোরআনে অনেক কাফিরের নাম উল্লেখ করা হলেও সুরা লাহাবের মতো আর কোনো সুরা নাজিল করা হয়নি। রাসুল (সা.)-এর ওপর যখন আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর জুলুম-নির্যাতন আর শত্রুতার সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন তাদের ব্যাপারে এই সুরা অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ এবং উপার্জন তার কোনো কাজে আসেনি। অচিরেই সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও। যে ইন্ধন বহন করে। তার গলদেশে পাকানো রজ্জু। (বুখারি, হাদিস : ৪৬১২)
যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান রেখে নেক কাজ করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য সুনিশ্চিত। পক্ষান্তরে যারা ইসলামের বিরোধিতা করে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের শাস্তি অবধারিত। সুরা লাহাব তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অতএব, সমকালীন আবু লাহাব ও উম্মে জামিলদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫