|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:২৩ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩১ অপরাহ্ণ

পানির ন্যায্য হিস্যার অভাবে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র আজ মরুভূমি


পানির ন্যায্য হিস্যার অভাবে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র আজ মরুভূমি


আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাতে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্য সংকটের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বালু জমে খণ্ড খণ্ড বালুচরে পরিণত হয়েছে। নদনির্ভরশীল তিন থেকে চার শতাধিক জেলে পরিবারকে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। বছরে শুষ্ক ও ভরা মৌসুমে নদে আশানুরূপ মাছ না মেলায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তাদের। তবে বন্যা বা ভরা মৌসুমে সামান্য সহযোগিতা মিললেও শুষ্ক মৌসুমে এ বরাদ্দ নেই।

 



উজানে বাঁধ নির্মাণ ও ব্রহ্মপুত্রের তলদেশ ভরাটের কারণে এ নাব্য সংকট পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে নদনির্ভর মানুষদের বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভাটির দেশ বাংলাদেশ- এখানে ন্যায্য পানিবণ্টন না হওয়া এবং তলদেশ ভরাট ও খনন কাজ না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।

 

 


উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের মাঝিপাড়ার আনন্দ দাস বলেন, নদীতে পানি না থাকায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। সবজায়গায় বালুচর পড়েছে। চিলমারী, নয়ারহাট, অষ্টমীরচর, ঢুষমারা এলাকায় ৪ শতাধিক দ্বীপচর পড়েছে। এই সময় নদীর পানি একবারে নিচে নেমে যায়। যার কারণে অন্যসময়ের তুলনায় মাছ পাওয়া যায় না।

 


 

সুনিল কুমার দাস জানান, মাছ মারলে খরচ হয়, না মারলে সংসার চলে না। এই সময়ে পরিবার নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়, নদীতে জাল ফেলার জায়গা নেই। মাছ বিক্রি না করলে লোন পরিশোধ করার উপায় নেই। ঘুরেফিরি আবার ধারদেনা করে সেই লোনের কিস্তি দিতে হয়।

 


 

শিবু চন্দ্র দাস বলেন, বন্যার সময় মাছ পাওয়া যায় না। তখন সরকারিভাবে চাল দেওয়া হয়। তবে সেই চাল সব জেলেরা পান না। কিন্তু এই সময়েও নদীতে মাছ নেই, কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। এই সময়ে সহায়তা পেলে কিছুটা স্বস্তিতে থাকা যেত।
 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে বিভিন্ন স্থানে বালুচর জেগে ওঠেছে। অনেক নৌকা দেখা যায় শুকনো জায়গায় পড়ে আছে। জেলেরা জাল সারানোর কাজ করছেন। অলস সময় পার করছেন অনেকেই। শুকিয়ে যাওয়া চরের কোথাও কোথাও ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন রকম শাকসবজি ও ফসল।
 

নদের নাব্য কমে যাওয়ায় চিলমারী থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর যেতে ফেরি এবং নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে দ্বিগুনেরও বেশি সময় ধরে পার হতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের সময় এবং আর্থিক ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। হাটবার আসলেই চরের মানুষের কষ্ট বেশি হয়ে পড়ে।
 

তেল ব্যবসায়ী ফরহাদ আলী বলেন, চরাঞ্চলীয় এলাকায় নেওয়ার জন্য নৌকা পর্যন্ত আনতে আগে এক ড্রাম তেলের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এক ড্রাম জ্বালানি তেল নৌকা পর্যন্ত আনতে পরিবহন ব্যয় হচ্ছে ১০০ টাকা।
 

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুকিয়ে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা চলার পথে নানাবিধ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদকে পরিকল্পিতভাবে খনন করা হলে নদটি এলাকাবাসীর আশীর্বাদ হয়ে থাকত।
 

বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের ৫টি ড্রেজারের মধ্যে তিনটি ড্রেজার দিয়ে খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। একদিকে খনন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ ফেরি চালু হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
 

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, নদীর নাব্য সংকটের বিষয়টি বিআইডব্লিটিএ দেখছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর জেলেদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সহায়তা দিয়ে আসছি। এখন তারপরও কোনো ধরনের সহায়তা আসলে তাদের দেওয়া হবে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫