চট্টগ্রামে ধর্ম উপদেষ্টা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কটুক্তি করলে আইনানুগ ব্যবস্থায় কঠোর শাস্তি পেতে হবে..!

বিশেষ প্রতিবেদন (চট্টগ্রাম):-
ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করা, দাঙ্গা হাঙ্গামা করা বা কোন একজনের অপরাধে তার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী ঘরে হামলা বা সম্প্রদায়গতভাবে দোষারোপ করা সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। এটা ফৌজদারী অপরাধ। এ ঘৃণ্য কাজ আমাদের আবহমানকালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে।
কাজেই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করতে হবে। তিনি বলেন, কেউ অপরাধ করে পার পাবে না, সরকার আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অবশ্যই তার বিচার করবে।
ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা গতকাল ( সোমবার)চট্টগ্রামের পিটিআই অডিটরিয়ামে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট চট্টগ্রাম আয়োজিত ‘ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম এর ভূমিকা’ শীর্ষক জেলা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিতর্কিত পোস্ট ও শেয়ার করেন। একে অন্যের ধর্ম নিয়ে বা ধর্মীয় গুরুদের নিয়ে কটাক্ষ করেন, বিরুপ মন্তব্য করেন। আবার অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে কোন কিছু না বুঝে সাধারণ মানুষের বাড়ী ঘরে হামলা করেন, অগ্নি সংযোগ করেন। এগুলো মারাত্বক অপরাধ। তাদের কোন ক্ষমা নেই। আমরা অপরাধীর ধর্মীয় সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয় দেখতে চাই না, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখতে চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রদায়গত সৌহার্দ্য আশেপাশের দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে ভাল। এখানে আমরা মিলে মিশে সকল ধর্মের অনুষ্ঠান পালন করি, উৎসব করি। কয়েকদিন পূর্বে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে উদযাপন করেছি। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি উপদেষ্টাগণ আঞ্চলিক পর্যায়ে গিয়ে সনাতনী ভাইদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল।
অনুষ্ঠানে কয়েকজন বক্তা বেহাত হওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার এবং সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে নতুন সিড়ি নির্মাণের দাবি জানান। পাশাপাশি প্রকল্পের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবি জানানো হয়।
এসব দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, যদি দেবোত্তর সম্পত্তি নিষ্কণ্টক হয় এবং বেহাত হয়ে থাকে তবে তা আইনের আওতায় উদ্ধার করা হবে, তবে মামলা মোকদ্দমা থাকলে তা সহজে উদ্ধার করা যায় না। এছাড়া সীতাকুন্ডে সিড়ি নির্মাণের বিষয়ে মন্দির কমিটির সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকল্প রাজস্বখাতে স্থানান্তর বিষয়ে তিনি বলেন, মসজিদভিত্তিক বা মন্দির ও প্যাগোড়াভিত্তিক এসব প্রকল্প অনেক বছর ধরে চলমান আছে। কোনটির ৮ম পর্যায় আবার কোনটির ৬ষ্ঠ পর্যায় চলছে। প্রকল্পে জনবল নিয়োগের সময় তাদের চাকুরির ধরণ ও শর্তাবলি উল্লেখ থাকে। কাজেই সে মোতাবেক প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে। তবে চলমান এসব প্রকল্প যেন বন্ধ না হয় সে বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্মানী বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, মসজিদভিত্তিক প্রকল্পের শিক্ষকদের সম্মানীর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৬ হাজার করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই আগামী বছর থেকে ডিপিপিতে অন্তর্র্ভূক্ত ও পাশ করে মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পের শিক্ষকগণ যেন সমহারে সম্মানী পেতে পারেন-সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্দিরগুলো শুধু পূজা বা লেখাপড়া শেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মন্দিরে যেন অনাথ বিধবা বিপত্নীক ও অসুস্থ্য মানুষ সেবা পায়- সে বিষয়ে ব্যবস্থা রাখার জন্য উপদেষ্টা মন্দির কমিটির প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, মন্দিরে আগত হতদরিদ্র মানুষ যদি বই খাতা, পোশাকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে না পারে-তাহলে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করলে সাহায্য দেওয়া হবে। সাহায্যের জন্য সরকারের নিকট পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে।
ড. খালিদ হোসেন বলেন, যারা নিজের দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে বাড়ী বানায় কিংবা অর্থ পাচার করে, তারা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না। আমাদের সকলকে প্রকৃত অর্থেই দেশপ্রেমিক হতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরিফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত, পরিমল কান্তি শীল, এডভোকেট পার্থ পাল চৌধুরী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক সরকার সারোয়ার আলম, উপ-প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশ বিশ্বাস, সহকারী প্রকল্প পরিচালক রিংকু কুমার শর্মা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে জুলাই-২০২৪ শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে নিরবতা পালন করা হয়।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫