পরিসংখ্যান সক্ষমতা ও মান পরিমাপক সূচক ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইনডেক্সে’ বাংলাদেশের মান এখন নিম্নগামী

প্রকাশকালঃ ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:২৯ অপরাহ্ণ ১৮৯ বার পঠিত
পরিসংখ্যান সক্ষমতা ও মান পরিমাপক সূচক ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইনডেক্সে’ বাংলাদেশের মান এখন নিম্নগামী

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহ গণনা এবং মূল্যস্ফীতি, মোট দেশজ উৎপাদনসহ (জিডিপি) অর্থনীতির নানা তথ্য-উপাত্তের পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও অর্থনীতিবিদদের সংশয় রয়েছে। এতে পরিসংখ্যান সক্ষমতা ও মান পরিমাপক সূচক ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইনডেক্সে’ বাংলাদেশের স্কোর (মান) এখন নিম্নগামী। 

গত ১০ বছরের ব্যবধানে এই স্কোর কমেছে ২১.৯ পয়েন্ট। ২০১৪ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের মান ছিল ৮০ পয়েন্ট। ২০২৩ সালে এই মান এসে দাঁড়ায় ৫৮.১ পয়েন্টে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইনডেক্সে’ এসব তথ্য উঠে এসেছে।  এর আগে ২০১৯-২০ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের মান ছিল ৬০-এর ঘরে।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ২০ অক্টোবর সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস। বিবিএসের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। বিবিএসের এই প্রতিবেদন  নিয়ে রয়েছে নানা মত।


তথ্যসূত্র ও উৎস, মেথডোলজি এবং সময়কাল এই তিন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ১৭৪টি দেশের মধ্যে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ২৫টি মানদণ্ডের বিপরীতে গড় স্কোর নির্ধারণ করে সংস্থাটি।

এই স্কোর তৈরিতে দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রের তথ্যের সরবরাহ ও পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ করে তারা। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান সূচক, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট বা জিডিপির হিসাব, লেবার ফোর্স সার্ভে, বাণিজ্য (আমদানি-রপ্তানি) এইচআইইএস, দারিদ্র্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজস্ব ও মুদ্রানীতিবিষয়ক তথ্য, বাজেট, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, সব বিভাগের আর্থ-সামাজিক তথ্য ইত্যাদি।


পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বিবিএস ভালো কাজ করছে। তারা অনেক জরিপের তথ্য-উপাত্ত সময়ের আগে দিচ্ছে। বিশেষ করে জনশুমারির তথ্য আমরা অনেক আগেই দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব দক্ষ টিম রয়েছে। তারা দক্ষতার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক উপায়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে থাকে, আমরা তা প্রকাশ করি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। যা আমাদের হিসাবে আসে, আমরা তাই প্রকাশ করি।’

মূলত তথ্যের উৎস দুর্বলতা, মেথডোলজিক্যাল দুর্বলতা বা মান নির্ধারণে দুর্বলতা, নির্ভুলতা ও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করতে না পারার কারণেই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের তথ্যের মান দুর্বল হচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।


সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি স্কোরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নিচে রয়েছে শুধু চীন আর আফগানিস্তান। দেশ দুটির স্কোর ৫৮.১ ও ৪৯.৮। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের স্কোর ৬৩.৮। পাকিস্তানের স্কোর ৬০.৭, ভিয়েতনামের স্কোর ৬৬। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের স্কোর ৭৫.১ আর জাপানের স্কোর ৮৫.৮।

পরিসংখ্যানগত সক্ষমতার মূল্যায়ন পদ্ধতির ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৮০। এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে স্কোর কমছে। ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই স্কোর ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশের মধ্যে। পরিসংখ্যানগত সক্ষমতার পর্যায়ক্রম ও সময়োপযোগিতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও স্কোর ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী রয়েছে।


খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেকোনো জরিপ বা গবেষণার জন্য যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি জরুরি, তা হলো সঠিকভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি, তথ্য সংগ্রহকারীদের নিয়োজন, প্রশিক্ষণ, সুপারভিশন ও কার্যক্রমগুলো প্রি-টেস্ট করা। আবার খাদ্যসংক্রান্ত যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, সেখানে খানার সদস্যরা কিভাবে তাদের খাদ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করছে, সেটি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে।

দেশের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখি তথ্যের ঘাটতি। পরে দেখি তথ্যের সৃষ্টি। ঘাটতি পূরণ করতেই করা হয় তথ্যের সৃষ্টি। অনেক ক্ষেত্রে তা অনুমিতভাবে ও অবৈজ্ঞানিক উপায়ে করা হয়ে থাকে। যার ফলে বাস্তবতার সঙ্গে অনেক বৈপরিত্য দেখা যায়।’ 

তিনি বলেন, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকার কারণে নীতিনির্ধারকরা সঠিক নীতি প্রণয়ন করতে পারেন না। এর ফলে আমরা দেখি ভুল সময়ে ভুল নীতি।’ তবে তাঁর প্রত্যাশা, সরকার নিয়মিত সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সঠিক নীতি প্রণয়ন ও অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করবে।