ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় দেড় কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মানসম্মত ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করতে বলা হলেও ঠিকাদারের লোকজন তা মানছেন না বলে দাবি স্থানীয়দের। পরে বাধার মুখে কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে গেছেন ঠিকাদার।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (আইইউজিআইপি) আওতায় একটি প্যাকেজে ৩টি রাস্তা ও একটি ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ব্যয় ধরা হয় সাত কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে উলিপুর হাসপাতাল মোড় থেকে বটেরতল জোনাইডাঙ্গা পর্যন্ত ৯৪২ মিটার রাস্তা নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
খুলনার মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্স কার্যাদেশ পায়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ২০ লাখ টাকা। কাজটি মোস্তফা অ্যান্ড সন্সের কাছ থেকে স্থানীয় ঠিকাদার শাহাদত কিনে নেন। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ২৮ নভেম্বর। সরকার পরিবর্তনের পর তাড়াহুড়া করে রাস্তার কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। তবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন। এরপর দীর্ঘদিন রাস্তার কাজ না করে ফেলে রাখেন ঠিকাদার।
মুক্তিযোদ্ধা ফজল উদ্দিনসহ অনেকের অভিযোগ, ঠিকাদার রাতের আঁধারে ট্রাক্টর দিয়ে ভাটার নষ্ট ইটের খোয়া ও নিম্নমানের বালু এনে রাস্তার কাজ শুরু করেন। স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দিলে ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যান।
রাস্তা নির্মাণের সময় ১০ ইঞ্চি গর্ত করে বালু খোয়া ফেলে সমান করার কথা। সেখানে ৬ ইঞ্চি গর্ত করা হয়েছে। এক নম্বর ইটের খোয়ার পরিবর্তে নষ্ট ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। হাত দিলেই সেই খোয়া ভেঙে যাচ্ছে। বালুর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নিষেধ করলেও ঠিকাদার মানছেন না। এভাবে কাজ করলে এ রাস্তা কয়েক মাসও টিকবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শিক্ষার্থী রায়হান শাওন জানায়, ঠিকাদারের সঙ্গে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলীর সখ্য রয়েছে। তারা মিলেমিশে সব কাজ করেন। এ কারণে মান নিয়ে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
একই ঠিকাদার দুই কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমা হাউস থেকে বাংলা লিংক টাওয়ার পর্যন্ত ৬৭৫ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের কাজ করছেন। এখানেও কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। নিম্নমানের পাথর ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে সাব-ঠিকাদার মোঃ শাহাদত হোসেনের সঙ্গে দেখা করা হয়। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
ঠিকাদার মোস্তফা অ্যান্ড সন্সের মালিক মোঃ শহীদুল হক বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি তিনিও জেনেছেন। সাব-ঠিকাদার কাজে ভুল করে থাকলে তাকেই ঠিক করে দিতে হবে।
এ বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহীনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘অভিযোগটি শতভাগ মিথ্যা। কেউ এর প্রমাণ দিতে পারবে না। আমি এখানে চাকরি করতে এসেছি, ব্যবসা নয়।’
উলিপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহারের বিষয়টি জানার পর কার্যাদেশ মেনে ঠিকাদারকে কাজ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও ঠিকমতো কাজ না করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।