প্রকাশকালঃ
১৭ জুলাই ২০২৩ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ ৩২৫ বার পঠিত
কিছু সাধারণ নিয়ম আপনি যদি নিয়মিত মেনে চলেন, তাহলে সহজেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর লাখপতি বা মিলিয়নিয়ার হতে পারবেন। লক্ষ্যে অবিচল থাকলে নির্ধারিত সময় পর ১০ লাখ টাকার মালিক হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। সে জন্য শুধু মানতে হবে সঞ্চয়ের কিছু সাধারণ নিয়ম। আর ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
কীভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতে লাখপতি হওয়া যায়, সে সম্পর্কে অনেক পদ্ধতি অনলাইনে পাওয়া যায়। সেখান থেকে আপনি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ভালো ধারণা পেতে পারেন। অবসরে যাওয়ার পর মানুষ যাতে অর্থকষ্টে না পড়ে, সেটাই হলো এ ধরনের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য।
একজন সঞ্চয়কারী প্রতি মাসে কত টাকা জমালে মিলিয়নিয়ার বা লাখপতি হতে পারবেন, সে সম্পর্কে একটি নিবন্ধ ২০১৬ সালে সিএনএনে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, কেউ যদি মাসে ১৭৫ ডলার করে নিয়মিত সঞ্চয় করেন, তাহলে চল্লিশ বছর পর তিনি লাখপতি হতে পারবেন। টাকার বদলে ডলারের হিসাব পড়েছেন তো! ভাবছেন ভুল হলো কি না? না, ঠিকই পড়েছেন, সিএনএনের নিবন্ধে ডলারের হিসাবেই সঞ্চয়ের কথা বলা হয়েছিল। তবে এ জন্য সঞ্চয়কারীকে এমন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, যেখান থেকে ১০ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে। ঠিক একইভাবে আপনি যদি ১৭৫ ডলারের পরিবর্তে প্রতি মাসে ১৭৫ টাকা জমান, তাহলে বাংলাদেশে আপনিও ৪০ বছর পর ১০ লাখ টাকার মালিক হতে পারেন।
শিরোনাম দেখে যতটা উৎসাহ নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন, এখন নিশ্চয়ই লম্বা সময়ের কথা ভেবে হতাশ হয়েছেন। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, আপনি যদি অল্প করে সঞ্চয় করে যান, তাহলে একটা দীর্ঘ সময় পর ভালো একটা অঙ্ক পাবেন। যদি আপনি একেবারেই না জমান, তাহলে কিন্তু শূন্য হাতে অবসরে যেতে হবে।
আপনি যত সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কর্মসূচি সম্পর্কে খোঁজ নেবেন, তাতে দেখবেন, সবই দীর্ঘমেয়াদি হয়। জীবন বিমা করতে গেলে ১৮ বছর মেয়াদি, ডিপিএস করতে গেলে ১০ বছর মেয়াদি ইত্যাদি। তাই আপনি যেকোনো সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরিকল্পনাই করুন না কেন, সব সময় মাথায় দীর্ঘ সময়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এতে দুইটা সুবিধা হবে। প্রথমত, অল্প অল্প সঞ্চয় সহজসাধ্য হবে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় পর বড় একটা অঙ্ক জমবে।
আপনার কাছে ১৭৫ টাকা যদি অতি নগণ্য মনে হয়, তাহলে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী তা বাড়িয়ে নিন। এতে আপনার রিটার্নের পরিমাণ বাড়বে। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, মাসে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার খরচের পর হাতে কিছুই থাকে না। সঞ্চয় করব কীভাবে? এই মনোভাবের কারণে বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু টাকা জমানো আর হয় না। এ জন্য বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, আপনি এখন যে বয়সে এবং যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, যা পারেন তা–ই সঞ্চয় করুন। সময়ের সঙ্গে আপনার আয় যখন বাড়তে থাকবে, তখন আপনি সঞ্চয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দিন।
আয় কম থাকলেও এবং মাস শেষে সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও আপনি যদি প্রতিদিন খুব সহজ একটা অভ্যাস মেনে চলেন, তাহলে মাসে ১৭৫ টাকা জমানো কোনো কষ্টসাধ্য কাজ হবে না। এ জন্য আপনি প্রতিদিন ৫ টাকা জমানোর সিদ্ধান্ত নিন। তাহলে মাসের ৩০ দিনে ১৫০ টাকা জমবে। আর বাকি থাকে ২৫ টাকা। আপনি যদি প্রতি সপ্তাহে বাজার করে আরও পাঁচ টাকা জমান, তাহলে ৪ সপ্তাহে জমবে ২০ টাকা। আর বাকি ৫ টাকা আপনি ৩০ দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন জমালেই মাসে ১৭৫ টাকা জমানো হয়ে যাবে।
আপনি দিনের শুরুতে বা অফিস থেকে ফিরে এই টাকা জমাতে পারেন। কোয়ান্টামে একটা কথা বলে, ‘দিন শুরু করুন দানে’। তেমনি আপনি টাকা জমানোর ভালো লাগা দিয়ে দিন শুরু করতে পারেন। তবে আপনার যদি ছেলেমেয়ে থাকে, তাহলে একটা মাটির ব্যাংক কিনতে পারেন এবং ছেলেমেয়ের হাতে এই টাকা দিয়ে তাদের মাধ্যমে জমাতে পারেন। এতে করে ছেলেমেয়ের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং তারা যখন বড় হবে, তখন হাতে অল্প টাকা থাকলেও তা থেকেই তারা সঞ্চয়ের চেষ্টা করবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মাসে এই ১৭৫ টাকা জমিয়ে কোথায় রাখব? এই টাকা থেকে কীভাবে ১০ শতাংশ মুনাফা পাব, যার মাধ্যমে ৪০ বছরে ১০ লাখ টাকার মালিক হওয়া যাবে? এর সহজ সমাধান হলো, আপনার আশপাশে যে ডাকঘর আছে, সেখানে গিয়ে একটা সাধারণ হিসাব খুলবেন। সাধারণ হিসাবে আপনি যত টাকা রাখবেন, তার ওপর ৭.৫% মুনাফা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে আপনার যত টাকাই থাকুক, তার ওপর আপনি এই হারে মুনাফা পাবেন।
এভাবে জমিয়ে যখন পাঁচ হাজার টাকা হবে, তখন আপনি ডাকঘরেই মেয়াদি হিসাবে সেই টাকা বিনিয়োগ করুন। মেয়াদি হিসাবে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা প্রদান করা হয়। সাধারণ হিসাবে যদিও কিছু কম হারে মুনাফা পাওয়া যায়, কিন্তু মেয়াদি হিসাবে আপনি বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। তাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত, যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ হিসাব থেকে আপনার সঞ্চয় মেয়াদি হিসাবে বিনিয়োগ করা। এভাবেই ৪০ বছর পর আপনি হয়ে যাবেন লাখপতি।