খালি হাতে ফিরলেন টিসিবির কয়েক শ কার্ডধারী লাইনে দাঁড়িয়ে

প্রকাশকালঃ ২২ মার্চ ২০২৩ ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ ৫৩৭ বার পঠিত
খালি হাতে ফিরলেন টিসিবির কয়েক শ কার্ডধারী লাইনে দাঁড়িয়ে

রকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ‘পরিবার কার্ডে’ পণ্য কিনতে গিয়েও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন কয়েক শ গ্রাহক। এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর টিসিবির পণ্য সরবরাহকারী বা ডিলারের একটি দোকানে। ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ওই দোকানের নাম আশরাফ ট্রেডার্স।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকেরা জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও কয়েক শ গ্রাহককে ওই দোকান থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে কোনো পণ্য কিনতে পারেননি। তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বিশৃঙ্খলার কারণে তারা গতকাল পণ্য সরবরাহ করেনি। তবে আজ বুধবার থেকে পণ্য সরবরাহ করা হবে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মাসে বিতরণের জন্য গত সোমবার দুই হাজার কার্ডের বিপরীতে টিসিবির কাছ থেকে পণ্য বুঝে পায় আশরাফ ট্রেডার্স। সেই খবর পেয়ে গতকাল সকালে টিসিবির পরিবার কার্ডধারী পাঁচ শতাধিক গ্রাহক সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে ভিড় করেন দোকানটির সামনে। 

‘সোমবার আমরা দুই হাজার কার্ডের বিপরীতে পণ্য পেয়েছি।সেসব পণ্য বিক্রির জন্য বেলা ১১টার দিকে দোকান খুলি। কিন্তু তিনজন গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রির পর তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এরপর নিরাপত্তার কথা ভেবে পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখি।’

সকালে দোকান খোলার পর সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে দোকানমালিক পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এরপরও গতকাল আর পণ্য বিক্রি করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তারা অপেক্ষমাণ গ্রাহকদের জানায়, আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে পণ্য বিক্রি করা হবে। তবে পণ্য কিনতে আসা গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, দোকান থেকে পণ্য দিতে দেরি করায় লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হন।

সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরেছেন কার্ডধারী গ্রাহক ও পল্লবী এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘গত মাসে টিসিবি পণ্য দেয়নি। সামনে রমজান মাস। তাই যখনই শুনলাম আজ (গতকাল) পণ্য দেবে, তখন আর দেরি না করে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু বেলা তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পণ্য পেলাম না।’

গত ১০ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে টিসিবি এক কোটি পরিবার কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। রমজান উপলক্ষে কার্ডধারী একজন গ্রাহকের কাছে ১ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি ছোলা বিক্রি করছে টিসিবি। এসব পণ্যের প্যাকেজ মূল্য ২৯০ টাকা। এসব পণ্যের বাইরে শুধু ঢাকায় ১ কেজি খেজুরও দিচ্ছে টিসিবি। ঢাকার বাইরে সারা দেশে টিসিবির পণ্যতালিকায় এখনো খেজুর নেই।

টিসিবি সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে কার্ডধারীদের মধ্যে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি শুরু হলেও ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটি কোনো পণ্য সরবরাহ করেনি পরিবেশকদের কাছে। সর্বশেষ ৯ মার্চ থেকে আবারও সরবরাহকারীদের কাছে পণ্য সরবরাহ শুরু করে। মিরপুরের পল্লবীর পরিবেশকের কাছে এ পণ্য পৌঁছায় ২০ মার্চ। এরপর গতকাল থেকে সেখানে বিক্রি শুরু হয়।

পল্লবীর আশরাফ ট্রেডার্স থেকে গতকাল টিসিবির পণ্য কিনতে আসা গ্রাহক তাসলিমা আক্তার জানান, সকাল সাতটায় তিনি দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ১১টার দিকে পরিবেশকের লোকজন এসে অপেক্ষমাণ ক্রেতাদের টিকিট দেওয়া শুরু করেন। এ সময় কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে তারা পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করলেও আর পণ্য বিক্রি করেননি ওই পরিবেশক।

এ ব্যাপারে পল্লবী থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক সজীব খান বলেন, ‘পরিবেশকের ডাকে টহল পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। শুরুতে সেখানে কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর পরিবেশক কেন আর পণ্য বিক্রি করেননি, তা আমরা বলতে পারব না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরিবেশক প্রতিষ্ঠান আশরাফ ট্রেডার্সের মালিক আশরাফুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে ওই পরিবেশকের সহকারী গুলজার হোসেন প্রথম বলেন, ‘সোমবার আমরা দুই হাজার কার্ডের বিপরীতে পণ্য পেয়েছি।সেসব পণ্য বিক্রির জন্য বেলা ১১টার দিকে দোকান খুলি। কিন্তু তিনজন গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রির পর তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এরপর নিরাপত্তার কথা ভেবে পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখি।’

পল্লবীর এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হ‌ুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।’