যেমন খুশি তেমন ব্যাটিং অর্ডার

প্রকাশকালঃ ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:২৩ অপরাহ্ণ ১৮৭ বার পঠিত
যেমন খুশি তেমন ব্যাটিং অর্ডার

বছরের মার্চে জোহানেসবার্গে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আনন্দ উদযাপনে তৎকালীন অধিনায়ক তামিম ইকবালের দুশ্চিন্তা ছিল একটাই— সাত নম্বরে কাকে যে সেট করব! এ বছরের মে মাসে ইংল্যান্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সময় প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের মুখে চওড়া হাসি, ‘আমার তো মনে হয় সাত নম্বরে (মেহেদী হাসান) মিরাজই সেরা।’

তামিম ইকবাল এখন জাতীয় দলের ত্রিসীমানায় নেই। তবে আছেন হাতুরাসিংহে। শুধু নেই মেহেদী মিরাজের ব্যাটিং অর্ডারের ঠিকঠিকানা। যেন ব্যাটিংয়ের বিশ্ব পরিব্রাজক—দুই থেকে আট নম্বরে তাঁকে খেলিয়েছেন হাতুরাসিংহে। এবারের বিশ্বকাপে চার ম্যাচেই ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন হয়েছে মিরাজের। তিন থেকে পাঁচে ওঠানামা করেছেন তিনি। 

অবশ্য মেহেদী মিরাজ একা নন, উদ্বোধনী জুটি আর মুশফিকুর রহিম বাদ দিলে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ‘ইয়ো ইয়ো’ খেলেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এমনকি দুর্দান্ত নৈপুণ্যে তিন নম্বর পজিশনটি নিজের করে নেওয়া নাজমুল হোসেন শান্তকেও টপ আর মিডল অর্ডারে ওঠানামা করতে হয়েছে।


ক্রিকেটে ‘ফ্লেক্সিবিলিটি’ বলে একটি কথার চল আছে। প্রয়োজনে যে কাউকে যেকোনো পজিশনে খেলার জন্য তৈরি থাকতে হয়। ম্যাচ পরিস্থিতির কারণে গতকাল যেমন মার্নাস লাবুশানের আগে মার্কাস স্টয়নিস আর জস ইংলিসকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এই অদলবদল করেছে রানের ঘোড়া ছোটানোর জন্য। বাংলাদেশ কোন দায়ে পড়ে একেক ম্যাচে যখন যাকে খুশি ব্যাটিংয়ে পাঠাল? ওপেনাররা রান করছেন না। শুরুর সেই চোট সামলাতেই কি মেহেদী মিরাজকে তিনে পাঠানোর পরিকল্পনা? তাহলে এই পজিশনে নাজমুল হোসেন যে এত এত রান করলেন, ব্যাটারের নির্দিষ্ট পজিশনে নৈপুণ্য দেখানোর আত্মবিশ্বাস—সবই অর্থহীন?

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে টপ অর্ডারে নেমে ফিফটি করেছেন মেহেদী মিরাজ, দলও জিতেছে। তাতেই পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিশ্বমানের পেস বোলিংয়ের সামনে ব্যাটিং ধস থামাতে মিরাজকে পাঠানো হয় পাঁচ নম্বরে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবার তিনে মিরাজ।


আর সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় চমক তাঁর চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা। নিশ্চয় মিরাজ জবরদস্তি করে নামেননি, সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের। যদিও এই চিন্তার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রথমত, পুনের ম্যাচেই প্রথম রান পেয়েছিলেন ওপেনাররা। ভালো শুরুর পরও মাঝপথে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতি সামলাতে দরকার ছিল অভিজ্ঞতার। চোটের কারণে সাকিব আল হাসান খেলেননি। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ছিলেন। মাহমুদ উল্লাহও ছিলেন। তবু চারে নামিয়ে দেওয়া হয় মিরাজকে, কোয়ালিটি পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে যাঁর পরীক্ষায় উতরে যাওয়া এখনো বাকি। 

মিরাজকে গবেষণার বিষয় বানাতে গিয়ে নাজমুলের পাশাপাশি তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন হয়েছে। তাতে সুফল মেলেনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ফিফটি ছাড়া রান নেই নাজমুলের ব্যাটে। অনেকটা বাধ্য হয়ে ছয়ে ব্যাটিং করা মুশফিকুর রহিম মাটি কামড়ে পড়ে আছেন, রানও করছেন।


তবে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচ শেষে ব্যাটিং গড়ে সবার ওপরে মাহমুদ উল্লাহ, ৮৭। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সুযোগই পাননি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে খেলায়নি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে যথাক্রমে অপরাজিত ৪১ ও ৪৬ রান করেছেন মাহমুদ। 

কিউইদের বিপক্ষে আট এবং পরের ম্যাচে পদোন্নতি পেয়ে মাহমুদের সাত নম্বরে ব্যাটিং করা মিরাজকে নিয়ে অকারণ গবেষণার মতোই অযৌক্তিক। তাঁর অভিজ্ঞতাকে লোয়ার অর্ডারে বিনিয়োগের চিন্তাটা কার? আরো চমকপ্রদ মাহমুদকে পেছনে ঠেলে ভারতের বিপক্ষে মিরাজকে মিডল অর্ডারে পাঠিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশ দলের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম। 

ধারাভাষ্যকাররাও বুঝতে পারেননি বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের মতিগতি। দেখা যাক, পরের ম্যাচগুলোয় আর কতভাবে ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট!