‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনা
ঢাকা প্রেস নিউজ
২০২১ সালে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, তার পরিবার ও অন্যান্যদের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের অপহরণ এবং কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর, শেখ হাসিনা সরকার এই দুর্নীতির বিষয়টি আড়াল করতে তৎপর হয়ে ওঠে। প্রতিবেদনটি নির্মাণের সাথে যুক্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য তৎকালীন সরকার একটি ব্রিটিশ আইনজীবীর পরামর্শ নেয়, বলে জানায় যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমস।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যকলাপ ফাঁস হওয়ার পর শেখ হাসিনা বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করেন। তিনি ডেভিড বার্গম্যানকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করেন, যিনি প্রতিবেদনটির মূল নির্মাতা হিসেবে চিহ্নিত হন। এছাড়া, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ব্রিটিশ আইনজীবী ডেসমন্ড ব্রাউনি কেসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সেই সময়, গণঅভ্যুত্থানের পর, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গণভবনে কিছু নথি পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি তথ্য হলো, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা লন্ডনে ডেসমন্ড ব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটির পর, যুক্তরাষ্ট্র তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা, মানহানিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছিল। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর, হুইসেলব্লোয়ার জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয় এবং প্রতিবেদনটির সাথে জড়িত অনেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
গণভবনে পাওয়া নথি থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার আলজাজিরার বিরুদ্ধে ছাড়াও ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবার পরিকল্পনা করেছিল। বার্গম্যান প্রতিবেদনটির নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন। এছাড়া, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বার্গম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছিল এবং এক সময় তাকে গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনাও করা হয়।
এ বিষয়ে সানডে টাইমস আরও জানায়, শেখ হাসিনার প্রতিনিধিরা আইনজীবী ক্লার্ক-উইলিয়ামসের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে প্রতিবেদনটি অনেক অপূর্ণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, তবে তা হাসিনার সম্মান ক্ষুন্ন করেছে। এই সময় আলজাজিরা এবং বার্গম্যানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। তাদের মধ্যে কেউ মানহানির মামলা করবেন, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে মামলা করানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়।
ডেসমন্ড ব্রাউন নিজে সানডে টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি শেখ হাসিনার সরকারকে প্রাথমিক পরামর্শ দিয়েছেন, তবে পরে কোনও অগ্রগতি হয়নি। আইনজীবী ক্লার্ক-উইলিয়ামস এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। শেষ পর্যন্ত, শেখ হাসিনা সরকার যুক্তরাজ্যে মামলা না করে, ইউটিউব ও ফেসবুককে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। তবে উভয় প্ল্যাটফর্মই বাংলাদেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫