মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পৃথিবীতে আগমনকারী নবী-রাসুলদের সংখ্যা কত?

মানবজাতির হিদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের কারো বর্ণনা কোরআন-হাদিসে রয়েছে এবং কারো বর্ণনা কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। প্রশ্ন হলো, পৃথিবীতে আগমনকারী নবী-রাসুলদের সংখ্যা কত? আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, নবী-রাসুলদের সংখ্যা অগণন। যাদের নাম জানা যায় এবং যাদের নাম জানা যায় না সবার প্রতি ঈমান রাখা আবশ্যক।
নবী-রাসুলদের আগমন ও সংখ্যা বিষয়ে কোরআন-হাদিসের বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।
সব জাতির কাছে এসেছেন নবী-রাসুল
পৃথিবীর সব জাতির কাছেই আল্লাহ নবী বা রাসুল প্রেরণ করেছেন। কোনো জাতিকেই ঐশী বার্তা থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাদের কাছে সতর্ককারী আসেনি।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৪)
সবার নাম জানা যায়নি
পৃথিবীতে আল্লাহ যত নবী ও রাসুলকে প্রেরণ করেছেন তাঁদের সবার নাম কোরআন ও হাদিসে আসেনি; বরং কোরআনের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় তাদের মধ্যে শুধু বিশেষ কয়েকজন নবী-রাসুলের নাম জানা যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ ছাড়া এমন রাসুল পাঠিয়েছি, যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে শুনিয়েছি ইতিপূর্বে এবং এমন রাসুল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাইনি।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৬৪)
সংখ্যা নির্ধারণ করা উচিত নয়
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে আতিয়া আন্দুলুসি (রহ.) বলেন, ‘এই আয়াতের দাবি হলো, নবীদের সংখ্যা অনেক, তাঁদের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। ...তাঁদের সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন।’ (আল মুহাররারুল ওয়াজিজ : ২/১৩৭)
আধুনিক ও প্রাচীনকালের ইসলামী পণ্ডিতরা এ বিষয়ে একমত যে নবী-রাসুলদের সংখ্যার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা দাবি করা উচিত নয়। সংখ্যা বিষয়ে যে মতটি পাওয়া যায় তা কেবল সম্ভাবনার মর্যাদা রাখে।
এক লাখ ২৪ হাজারের ব্যাখ্যা
একাধিক হাদিসে পৃথিবীতে আগমনকারী নবী-রাসুলদের সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজার বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন আবু জর (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, নবীদের সংখ্যা কত? তিনি উত্তর দিলেন, এক লাখ ২৪ হাজার।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে কতজন রাসুল? তিনি বললেন, ৩১৩ জনের একটি বড় দল। আমি বললাম, তাঁদের মধ্যে প্রথম কে? বললেন, আদম। (সহিহ ইবন হিব্বান, হাদিস : ৩৬১)
মুহাদ্দিসগণ উল্লিখিত হাদিসের সনদকে দুর্বল বলেছেন। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, উল্লিখিত বর্ণনা শুদ্ধ হওয়া ও না হওয়া উভয় সম্ভাবনা রাখে। তাই এর মাধ্যমে কোনো সংখ্যা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। (আল জাওয়াবুস সহিহ : ২/২৩১)
দুই লাখের মতটি সঠিক নয়
অনেকে বলেন, এক লাখ বা দুই লাখ ২৮ হাজার নবী ও রাসুল। এক লাখ ২৪ হাজারের ব্যাপারে দুর্বল বর্ণনা পাওয়া গেলেও দুই লাখের ব্যাপারে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই বলা যায়, মতটি সঠিক নয়। আল্লামা মোল্লা আলী কারি (রহ.) হাফেজ জালালি (রহ.)-কে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো বর্ণনা পাইনি।’ (ইকদুল ফারায়িদ, পৃষ্ঠা ৩৭)
মুমিনের বিশ্বাস যেমন হবে
নবী-রাসুলদের ব্যাপারে কোনো প্রকার সংখ্যা নির্ধারণ না করে মুমিন বলবে, আল্লাহ যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন সবার ওপর আমরা ঈমান এনেছি। ফেরেশতাদের সংখ্যা আমরা জানি না। তবু আমরা ঈমান এনেছি। অনুরূপভাবে নবী-রাসুলের সংখ্যাও আমরা জানি না। এসবের সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে তাঁদের প্রত্যেকের ওপর আমরা ঈমান এনেছি। ঠিক যেমনটি আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবগুলোর প্রতি এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৫)
আল্লামা ইবনে জিবরিন (রহ.) বলেন, ‘এ বিষয়ে (সংখ্যা) উত্তম হলো চুপ। আর আবশ্যক হলো যাদের নাম জানা যায় তাদের ব্যাপারে সবিস্তারে বিশ্বাস রাখা এবং যাদের নাম জানা যায় তাদের ব্যাপারে সামগ্রিকভাবে বিশ্বাস রাখা।’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়া : ১/৪১)
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫