ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৫২টি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংক চালুর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার লাইসেন্স পেতে ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে। সব কটিই যৌথ উদ্যোগে আবেদন করা হয়েছে। কোনো কোনো আবেদনে ১০টি ব্যাংকের জোটও রয়েছে। সুতরাং ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে চেষ্টা করছে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্টার্টআপ কোম্পানি, মোবাইল অপারেটর, গ্যাস পাম্প কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, ঢেউ শিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও রয়েছে। আবার বিদেশি আর্থিক প্রযুক্তি কোম্পানিও আবেদন জমা দিয়েছে। এর বাইরে আরও চার প্রতিষ্ঠান টাকা জমা দিলেও নির্ধারিত সময়ে আবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন অনলাইনে জমা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কবে নাগাদ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে ও কতটি ব্যাংক লাইসেন্স পাবে—এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘আবেদনগুলো যাচাই–বাছাই শেষে পরিচালনা পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত হবে। ৫২টি আবেদন যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগবে।’
জানা গেছে, ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর গত জুনের শেষ সপ্তাহে আবেদন আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবেদন ফি বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংকে অফেরতযোগ্য পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংক করতে প্রয়োজন হয় ৫০০ কোটি টাকা।
নীতিমালায় বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে। এই ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
ডিজিটাল ব্যাংককে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।
বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক আছে ৬১টি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কারা আবেদন করেছে
জানা গেছে, ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে ১০ ব্যাংকের জোট ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এই ১০টি ব্যাংক সব মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। এই জোটে রয়েছে সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত ‘বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক’–এর সঙ্গে বর্তমান উদ্যোক্তা ব্র্যাক ব্যাংকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানি ইন মোশন এলএলসি, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট গ্রুপ ও সফটব্যাংক ভিশন ফান্ড। ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের জন্যও আবেদন করেছে নগদের বর্তমান ও অন্যান্য কিছু উদ্যোক্তা।
এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন করেছে। মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক ও তাদের মূল কোম্পানি ভিওন মিলে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের আবেদন জমা দিয়েছে।
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে একটি জোট আবেদন করেছে। তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনা। এর সঙ্গে রয়েছে ইউসিবির উদ্যোক্তাদের কোম্পানি আরামিট, যারা মূলত ঢেউ শিট উৎপাদন করে। এই জোটে আরও আছে ইউসিবির উদ্যোক্তাদের কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস। জেনেক্স ইনফোসিস হলো এনআরবিসির কয়েকজন উদ্যোক্তার কোম্পানি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রেখে মানুষ টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এমন সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া কতটা সময়পযোগী হবে, এটা বিবেচনা করতে হবে। যাকে তাকে এসব ব্যাংকের লাইসেন্স দিলে বিপর্যয় ঘটবে।’
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫