বৃষ্টিমুখর দিনে মহানবী (সা.)-এর ৮ আমল

প্রকাশকালঃ ২২ মে ২০২৩ ০৩:৩৫ অপরাহ্ণ ১৬৪ বার পঠিত
বৃষ্টিমুখর দিনে মহানবী (সা.)-এর ৮ আমল

প্রখর রোদে চারদিক যখন উত্তপ্ত তখন একপশলা বৃষ্টি যেন প্রশান্তির বার্তা নিয়ে হাজির হয়। মুহূর্তেই স্বস্তিতে ভরে ওঠে সবার মন। সজীবতায় মেতে ওঠে গাছ-গাছালির সবুজ পাতা। রূপ ধারণ করে প্রকৃতি নতুন সাজে।

মুমিনের কাছে বৃষ্টির রয়েছে নতুন বার্তা। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বৃষ্টির উপকারিতার কথা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৭)

বৃষ্টিমুখর দিনে রাসুল (সা.)-এর কয়েকটি আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো : 

১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : জায়দ বিন খালিদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুদায়বিয়ার বছর একদিন আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বের হই।

এক রাতে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। রাসুল (সা.) আমাদের নিয়ে ফজর নামাজ পড়েন। এরপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?’ আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বলেন, আজ আমার অনেক বান্দা ঈমান এনেছে এবং অনেকে কুফরি করেছে।

যারা বলেছে, আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি; তারা আমার প্রতি ঈমান এনেছে এবং নক্ষত্রের প্রভাব অস্বীকার করেছে। পক্ষান্তরে যারা বলেছে, আমরা অমুক তারকার প্রভাবে বৃষ্টি লাভ করেছি; তারা তারকার প্রতি বিশ্বাস রেখেছে এবং আমাকে অস্বীকার করেছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪১৪৭)

২. বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা : অনেকে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পছন্দ করে। হাদিসেও হালকাভাবে ভেজার কথা এসেছে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।

এমন সময় বৃষ্টিবর্ষণ শুরু হয়। তখন রাসুল (সা.) কাপড়ের সামান্য অংশ তুলে নেন। ফলে (তার শরীরের কিছু অংশ) বৃষ্টিতে ভিজে যায়। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি এমন করলেন কেন? তিনি বললেন, ‘কারণ তা একটু আগেই মহান আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৮)

৩. কল্যাণের প্রার্থনা : রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় কল্যাণের দোয়া করতেন। তিনি বৃষ্টিবাহী সব ধরনের আজাব ও অকল্যাণ থেকে মুক্তি চেয়ে উম্মাহর জন্য দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বৃষ্টি দেখলে এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিয়া’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৩২)

৪. দোয়া কবুল হয় : বৃষ্টিবর্ষণের মুহূর্তটি মানুষের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের সময়। এ সময় মানুষের দোয়া কবুল হয়। সাহাল বিন সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুই সময় দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না কিংবা খুবই কম ফেরানো হয়। আজানের সময় এবং যখন শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ চলে। আরেক বর্ণনা মতে, বৃষ্টিবর্ষণের সময়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪০)

৫. আজাব থেকে মুক্তির দোয়া : অনেক সময় বৃষ্টির মাধ্যমে আজাব ঘনিয়ে আসে। অতিবৃষ্টির কারণে তৈরি হয় ভয়াবহ বন্যা বা ভীতিকর পরিবেশ। অতীতে নুহ (আ.)-এর জাতি ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংস হয়েছিল। তা ছাড়া হুদ (আ.)-এর সম্প্রদায় আদ গোত্রও প্রচণ্ড বাতাসে ধ্বংস হয়েছিল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তারা উপত্যকার প্রান্তে মেঘ দেখল তখন বলতে লাগল, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে, (তখন বলা হলো) বরং এটা  তাই, যা তোমরা তাড়াহুড়া করতে, এই ঝোড়ো বাতাসে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ২৪)

৬. আজাবের শঙ্কা : বৃষ্টির আগ মুহূর্তে মেঘের গর্জন শুনলে রাসুল (সা.)-এর চেহারায় কিছু দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যেত। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি কখনো রাসুল (সা.)-কে এমনভাবে হাসতে দেখিনি যে তাঁর আলা জিহ্বা দেখা যায়। তিনি সব সময় মুচকি হাসতেন। তিনি মেঘ বা বাতাস দেখলে তাঁর চেহারায় শঙ্কা দেখা যেত। আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষ  মেঘ দেখে খুশি হয়। কারণ তাদের আশা একটু পরই বৃষ্টি হবে। আর আপনি মেঘ দেখলে আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা যায়? তখন তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা, আমি কিভাবে নিশ্চিত হব যে তাতে আজাব নেই? কারণ অনেক সম্প্রদায় প্রবল বাতাসে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। অনেক সম্প্রদায় মেঘ দেখে বলেছে, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮২৮)

৭. মেঘের গর্জন শুনে দোয়া : মেঘের শব্দ শুনলে দোয়া পড়া সুন্নত। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) মেঘ ও বজ্রের আওয়াজ শুনলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগাদাবিকা, ওয়া লা তুহলিকনা ওয়ালা তুহলিকনা বি আজাবিকা ওয়া আফিনা কাবলা জালিকা। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনি আমাদের আপনার ক্রোধ দিয়ে হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করবেন না এবং এর আগেই আমাদের নিরাপদে রাখুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪০৫)

৮. অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির দোয়া : অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি চেয়ে রাসুল (সা.) দোয়া করেছেন। আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, জুমার দিন এক ব্যক্তি মিম্বার বরাবর দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে। তখন রাসুল (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন। সেই লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং রাস্তাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দেন। রাসুল (সা.) দুই হাত তুলে দোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহুম্মাস কিনা আল্লাহুম্মাস কিনা আল্লাহুম্মাস কিনা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাদের বৃষ্টি দিন (তিনবার বলেন)। ...পরের জুমায় ওই দরজা দিয়ে এক লোক প্রবেশ করে। রাসুল (সা.) খুতবা দিতে দাঁড়ালে সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, সম্পদ নষ্ট হচ্ছে এবং পথঘাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি তা বন্ধ করেন। রাসুল (সা.) দুই হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা, ওয়া লা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল জিবালি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাদের ওপর নয়, আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন। টিলা, পাহাড়, উঁচু ভূমি, মালভূমি, উপত্যকা ও বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। আনাস (রা.) বলেছেন, এরপর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় এবং আ
মরা রোদের মধ্যে হাঁটতে শুরু করি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০১৩)

মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন।