|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩৬ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ভারতের পাঞ্জাবে যেসব নবীদের মাজার অবস্থিত।


ভারতের পাঞ্জাবে  যেসব নবীদের মাজার অবস্থিত।


মহান আল্লাহ মানবজাতির জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা : আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত (ধর্মদ্রোহী/শয়তান) থেকে দূরে থাকো..।(সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘...প্রত্যেক জাতির জন্য আছে পথপ্রদর্শক। (সুরা : রাদ, আয়াত ০৭)

যুগে যুগে এক লাখ ২৪ হাজার মতান্তরে দুই লাখ ২৪ হাজার নবী-রাসুলের আগমন ঘটেছে।

পবিত্র কোরআনে আছে ২৫ জনের নাম। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নবী-রাসুলদের কেউ বাংলাদেশ বা ভারত উপমহাদেশে আগমন করেননি। অন্যদিকে প্রবল ধারণা আছে ভারতের পাঞ্জাবে কয়েকজন নবীর সমাধির অস্তিত্ব সম্পর্কে।

ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে, আদম (আ.)-এর দশম অধস্তন পুরুষ নুহ (আ.)।

নুহ (আ.)-এর চার পুত্র : সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াম অথবা কেনান। নুহ (আ.)-এর পুত্র হামের পুত্রদের একজন : হিন্দ। হিন্দের পুত্ররা হলেন : বঙ্গ (বঙ্গ থেকে বঙ্গদেশ/বাংলাদেশ), পুরব, দখিন, নাহরাওয়াল। অযোদ্ধায় আছে হিন্দের সমাধি।

পবিত্র কোরআনের বর্ণনানুযায়ী নুহ (আ.)-এর নৌকা ঠেকে জুদি পাহাড়ে। হিন্দি ভাষায় অযোদ্ধার উচ্চারণ আয়োদ্ধা, যা জুদি শব্দের রূপান্তর।

রিয়াজুস সালাতিনগ্রন্থকার গোলাম হুসাইন সেলিম লেখেন : নুহ (আ.)-এর যুগে যে মহাপ্লাবন অনুষ্ঠিত হয় তাতে...নুহ (আ.)-এর সঙ্গী মুষ্টিমেয় মুসলমান রক্ষা পেয়ে যান....নুহ (আ.)-এর পুত্র হামতাঁর পিতার অনুমতি নিয়ে পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে মনুষ্য বসতি স্থাপন করেন...হামের... প্রথম পুত্রের নাম হিন্দ’, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সিন্ধ’, তৃতীয় পুত্রের নাম হাবাস’, চতুর্থ পুত্রের নাম জানাজ’, পঞ্চম পুত্রের নাম বার্বারও ষষ্ঠ পুত্রের নাম নিউবাহ। যেসব অঞ্চলে তাঁরা উপনিবেশ স্থাপন করেন, তাঁদের নামানুসারেই সেসব অঞ্চলের নামকরণ করা হয়...।’ (বাংলাদেশে ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন) কাজেই, ভারতের বুকে নবী-রাসুলদের আগমনের ধারণা প্রবল।

পাঞ্জাবের বারাস এলাকায় টিলার ওপর প্রাচীরঘেরা কবরস্থানে আছে লম্বা লম্বা ৯টি কবর। গেটে লেখা কুবুরে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম। প্রসিদ্ধি আছে, এগুলো নবীদের কবর।

 

হুসনুল আজিজ গ্রন্থে আছে, শায়খ আহমাদ সেরহিন্দি [মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.)] কাশফের মাধ্যমে জানতে পারেন, এখানে নবীদের কবর আছে...তাঁরা সংখ্যায় ১৩ জন। তাদের মধ্যে পিতা-পুত্রও আছেন। পিতার নাম ইবরাহিম, পুত্র হজর। প্রসিদ্ধ মতে, বারাসে অন্তত ৭৫ জন নবীর সমাধি আছে। প্রতিকূল পরিবেশে হারিয়েছে নবীদের স্মৃতিচিহ্ন। বর্তমানে নবীযুগের চারটি মসজিদের তিনটি শিখ, হিন্দুদের দখলে! একটি শুধু মুসলমানদের সংরক্ষণে অটুট।

 

মাওলানা সৈয়দ জাওয়ার হুসাইন লেখেন, ‘...একদিন মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) সেরহিন্দের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কয়েক মাইল দূরে বারাস অঞ্চলে জোহরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজের পর দীর্ঘক্ষণ মুরাকাবা করলেন। এরপর সঙ্গীদের বলেন, কাশফের দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এখানে বহু নবীর কবর আছে...।

 

মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) তাঁর পুত্রকে লেখেন, ‘বৎ, এ দ্বিন (নগণ্য) যত দূর লক্ষ্য করেছে ও দৃষ্টিপাত করেছে, তাতে এমন কোনো স্থান পায় না, যেখানে আমাদের নবীদের দাওয়াত পৌঁছেনি...এমনকি ধারণাতীতভাবে ভারতের মাটিতেও।

 

মুজাদ্দিদ আলফে সানি সর্বপ্রথম কবরগুলো চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের কবর থেকে নুর বের হয়ে আসমানের দিকে যেতে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে নবীদের আলাপ-পরিচয় হয়। তিনি বিশেষ কারণে তাঁদের নাম বলেননি। নুহ (আ.) ও ইবরাহিম (আ.)-এর মধ্যবর্তী সময়কালে তাঁরা ছিলেন আদ সম্প্রদায়ের নবী।

 

আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘আমার মন সাক্ষী দেয় যে এগুলো নবীদেরই কবর। শাইখুল হাদিস হজরত জাকারিয়া, হজরতজি ইউসুফ কান্ধলবি (রহ.), দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক মুহতামিম মাও. রফিউদ্দিনসহ অনেকেই কবরগুলো জিয়ারত করেছেন।

 

মাকবারার পশ্চিমে আছে মসজিদে আম্বিয়া। স্থানীয় এক মুরব্বি বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকেই আমরা জেনে এসেছি এগুলো নবীদের কবর...পুরো হিন্দস্তানে বড় বুজুর্গদের যত কবর আছে, দু-একটি বাদে সবখানেই বিদআতি কর্মকাণ্ড হচ্ছে। অবাক ব্যাপার হলো, এখানে আগেও কোনো বিদআত ছিল না, এখনো নেই। এতেই বোঝা যায়, এগুলো নবীদের কবর।

 

বর্তমানে এ কবরস্থানের সংরক্ষণ, উন্নয়নের দায়িত্বে আছেন পাঞ্জাবের হাজি মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন কোটলাবি। তাঁর প্রচেষ্টায় এখানে চালু হয়েছে মক্তব, হিফজখানা। পরিশেষে নাম না জানা নগর-বন্দর, গ্রাম-বিজন প্রান্তরে শুয়ে থাকা আম্বিয়া (আ.) কিরামের প্রতি জানাই ভক্তিপূর্ণ সালাম।

 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫