দেশে ফিরলেন হামজা চৌধুরী

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৭ মার্চ ২০২৫ ০২:২১ অপরাহ্ণ   |   ১৩০ বার পঠিত
দেশে ফিরলেন হামজা চৌধুরী

ক্রীড়া প্রতিবেদক
 

অপেক্ষার প্রহর শেষে অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখলেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী। সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। "ওয়েলকাম টু মাদারল্যান্ড, হামজা"—এমন স্লোগানে মুখর ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হামজা পৌঁছেছেন বাংলাদেশে।
 

গত ডিসেম্বরেই ফিফা থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমোদন পেয়েছিলেন হামজা। এরপর থেকেই তাকে ঘিরে দেশজুড়ে তৈরি হয় ব্যাপক উন্মাদনা। সেই উত্তেজনা আরও বাড়ে যখন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভারত ম্যাচের প্রাথমিক স্কোয়াডে তার নাম ঘোষণা করেন। এখন তার চূড়ান্ত দলে থাকাও প্রায় নিশ্চিত।
 

ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলে সরাসরি সিলেটের বিমানে ওঠেন হামজা। বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ম্যানচেস্টার থেকে সিলেটগামী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে রওনা হয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি পৌঁছান। সেখান থেকে রওনা দেন নিজ গ্রাম হবিগঞ্জের স্নানঘাটের উদ্দেশে।
 

হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সাতজন নির্বাহী সদস্য। তাদের সঙ্গে ছিলেন হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পরপরই তাকে বরণ করে নেন বাফুফে কর্তারা।
 

সিলেট ব্যুরো থেকে মুকিত রহমানী জানান, বিমানবন্দরে হামজাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন সিলেটের ক্রীড়ানুরাগী ও ক্ষুদে ফুটবলাররা। তার আগমন উপলক্ষে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক ও নিজ গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক তোরণ। তবে সিলেটে কোনো আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার আয়োজন না থাকলেও হবিগঞ্জের বাহুবলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
 

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে হামজাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাকে এসকট করে নগরী পার করানো হবে এবং জেলা পুলিশও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
 

হামজার আগমনকে ঘিরে স্নানঘাটসহ পুরো জেলায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী জানান, হামজার নিজ গ্রাম সাজানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে। কৃতী সন্তানকে বরণ করতে প্রস্তুত গ্রামবাসী।
 

শান্ত ও নম্র স্বভাবের হামজা খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন খ্যাতি ছড়িয়েছেন, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠেছেন। গ্রামের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে স্নানঘাটে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা, যেখানে এতিম শিশুরা পড়াশোনা করছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর পর দেশে ফিরলেন হামজা চৌধুরী।
 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ভাত-গরুর মাংস তার প্রিয় খাবার। দেশি সবজিও তিনি পছন্দ করেন। হামজার খাবারের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের মাংস রাখা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। তিনি রাত কাটাবেন তার পৈতৃক ভিটায়। স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী বলেন, "আমাদের গ্রামের সন্তান দেশের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা তার আগমনে উচ্ছ্বসিত, বিশেষ করে তরুণরা তাকে একনজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ছোটবেলায় হামজা যখন গ্রামে আসতেন, তখন আমিও তার সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের প্রতি তার টান তখন থেকেই ছিল।"
 

শুধু হামজা নন, তার মতো আরও প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখতে চান হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী।
 

আগামীকাল ঢাকায় আসতে পারেন হামজা। এরপর জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেক হতে পারে। ২০ মার্চ বাংলাদেশ দল শিলংয়ের পথে রওনা দেবে, আর এর আগে ১৮ মার্চ কোচ কাবরেরা সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ও হামজাকে হাজির করবেন।