|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২০ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৪২ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:১১ অপরাহ্ণ

ডিমের মূল্য এত দ্ধির পেয়েছে কেন?


ডিমের মূল্য এত দ্ধির পেয়েছে কেন?


খুচরা বাজারে যখন একটি ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তখন পোলট্রি শিল্পের দিকে আবারও ‘মূল্য কারসাজির’ অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। ডিমের মূল্য বৃদ্ধির এই বিতর্কে কেউই দেশের লেয়ার ফার্মার, যাঁরা ডিম উৎপাদন করছেন, তাঁদের সংখ্যা বা অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান প্রকাশ করেননি।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, দেশের মোট লেয়ার ফার্মের সংখ্যা, এর মধ্যে কতটি উৎপাদনে রয়েছে আর কতটি বন্ধ রয়েছে; তার অফিশিয়াল ডেটায় বড় ফারাক রয়েছে। দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছে মুরগির বাচ্চা ও ফিড বিক্রি করে, কাজী ফার্মস তাদের মধ্যে অন্যতম। 

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে বাজার সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করে, যেগুলো সংগ্রহ করেন বিক্রয়কর্মীরা। এই তথ্যগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলেই ডিমের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।


ওপরের গ্রাফটিতে লেয়ার ফিডের দাম দেখানো হয়েছে, যা ডিম উৎপাদনের জন্য লেয়ার ফার্মারদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে শস্যের দাম বেড়ে যায়। এক বছরের মধ্যে খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এটি ডিমের উৎপাদন খরচের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। কারণ, ফিড কেনা পোলট্রি খামারিদের সবচেয়ে বড় খরচ। দ্বিতীয় গ্রাফ দেখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।

এই গ্রাফটিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের জাতীয় ডিম উৎপাদনের দৈনিক পরিমাণ দেখা যাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি কাজী ফার্মসের আনুমানিক হিসাব। গ্রাফটি দেখলে বোঝা যায় এক বছরে ডিমের উৎপাদন কমেছে ১৪ শতাংশ। কারণ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লেয়ার ফার্মার ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

এর স্পষ্ট কারণ রয়েছে ফিডের দামসংক্রান্ত প্রথম গ্রাফে। দাম বাড়ায় খামারিরা ফিড কিনতে পারছিলেন না। মনে রাখতে হবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে করোনা মহামারির ভয়াবহ দুই বছরের পরপরই। যাতে সব খামারিই মূলধন হারিয়েছেন। তাই এটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার, ফিডের দাম বাড়ায় লেয়ার ফার্মাররা ডিম উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়েছেন।


ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ডিমের চাহিদার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভোক্তারা আগের মতোই ডিম চান। কিন্তু সরবরাহ কমে গেছে। যেকোনো বাজারে সরবরাহ কমে গেলে চাহিদা পূরণ হয় না।

ঘাটতির কারণে বেড়ে যায় দাম। এটি মৌলিক অর্থনীতি। তাই সহজেই বলা যায়, বিভিন্ন মহল থেকে তোলা ‘মূল্য কারসাজির’ অভিযোগ ভিত্তিহীন। বাস্তবে দেশে যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো ডিমের ঘাটতি। এটাই দাম বাড়ার কারণ। অর্থনীতির চাহিদা ও জোগান নীতিও তা-ই বলে।

সরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবারই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পোলট্রি শিল্প ডিমের দাম হেরফের করছে এমন অভিযোগ তোলা বন্ধ করা উচিত। যেখানে ডিমের ঘাটতির বিষয়টি সুস্পষ্ট, সেখানে ‘কারসাজির’ মাধ্যমে দাম বাড়ানোর অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। 


দেশে পরিচালিত পোলট্রি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজী ফার্মস সব সময় প্রতিযোগিতামূলক এসএমএস নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিম বিক্রি করে। এই ধরনের নিলামে কারও পক্ষে দামের হেরফের করা সম্ভব নয়। কারণ গ্রাহকেরা যা বিড করেন, তার ওপর ভিত্তি করে ডিমের দৈনিক মূল্য নির্ধারিত হয়।

তাই সরকারের উচিত ডিমের ঘাটতির প্রকৃত সমস্যা সমাধানে নজর দেওয়া। দেশের অসংখ্য লেয়ার খামারির কাছে ফিড কেনার প্রয়োজনীয় মূলধন নেই। তাঁদের মূলধন জোগানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

সহজ শর্তে ঋণ বা অন্য কোন পদ্ধতিতে লেয়ার ফার্মারদের মূলধন জোগান দেওয়া গেলে পোলট্রি খাত সমপ্রসারিত হবে। ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। এ বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে শুধু  পোলট্রি শিল্পের দিকে আঙুল তুললে কোনো সমাধান হবে না।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫