উদ্ধারকৃত বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে ফের আগ্রাসন: নীরব প্রশাসন, শঙ্কিত জনতা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ জুলাই ২০২৫ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ   |   ৬৫ বার পঠিত
উদ্ধারকৃত বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে ফের আগ্রাসন: নীরব প্রশাসন, শঙ্কিত জনতা

ঢাকা, ২২ জুলাই ২০২৫: কিছুদিন আগেই দখলমুক্ত করে প্রাণ ফিরিয়ে আনা বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের পুনরুদ্ধারকৃত জমি আবারও প্রভাবশালী মহলের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে যেখানে টইটুম্বুর পানি থাকার কথা, সেখানে অবাধে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদীর জায়গা। প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখতে পান, বেশ কিছু ট্রাক ও এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি ফেলে নদীর জমি ভরাট করে সমান্তরাল করার কাজ করছে একদল লোক। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নীরবতার সুযোগ নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, যা নদী পুনরুজ্জীবিত করার সকল প্রচেষ্টাকে ম্লান করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি, সরকার ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের উল্লেখযোগ্য অংশ দখলমুক্ত করা হয়েছিল। খনন ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছিল, যা স্থানীয় পরিবেশবিদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছিল। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে চ্যানেলটি পানিতে ভরে উঠে তার পূর্বের রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছিল।

কিছুদিন পূর্বেও নদীর উদ্ধারকৃত অংশ গুগল ম্যাপে দৃশ্যমান 

কিন্তু সেই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন পূর্বের চিত্র গুগল ম্যাপে এখনো দৃশ্যমান (23°43'22.9"N 90°22'24.2"E) । সরেজমিনে দেখা গেছে, চ্যানেলের বিভিন্ন অংশে রাতের আঁধারে মাটি ফেলা হচ্ছে। বড় বড় ট্রাক ভরে মাটি এনে নদীর ভেতরের জমি ভরাট করা হচ্ছে, যা দেখে মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে চ্যানেলটিকে আবারও সংকুচিত করার চেষ্টা চলছে। এই ভরাট প্রক্রিয়ার কারণে নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বর্ষার পানি নিষ্কাশনেও সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই দখলদারিত্বের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জড়িত। তাদের ক্ষমতার দাপটে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। একাধিকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও দৃশ্যত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, "আমরা ভেবেছিলাম এবার বুঝি নদীটা বাঁচবে। কিন্তু চোখের সামনে দেখছি আবার কীভাবে মাটি ফেলে ভরা হচ্ছে। এদের এত ক্ষমতা যে প্রশাসনও কিছু বলছে না।"
পরিবেশবিদরা এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এভাবে পুনরুদ্ধারকৃত নদী দখল হয়ে গেলে সরকারের শত শত কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাবে। একইসাথে এটি পরিবেশের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও প্রকট করবে।

বর্তমানে উদ্ধারকৃত অংশে ভারী যান্ত্রপাতি দিয়ে ভরাট কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিস ও সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় কর্তৃক এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অভিযান পরিচালিত হয়নি।
বুড়িগঙ্গা চ্যানেল রক্ষা আন্দোলন নামে সামাজিক সংগঠন এই ঘটনায় দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অবিলম্বে এই দখলদারিত্ব বন্ধ করা না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সরকার নদী রক্ষায় বদ্ধপরিকর, সেখানে কীভাবে প্রভাবশালী মহলের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চলছে এবং প্রশাসন কেন নিশ্চুপ?