ইসলামে মানবিক জীবনের নানা দিক

প্রকাশকালঃ ৩১ জুলাই ২০২৪ ০১:৪৪ অপরাহ্ণ ৪৩৩ বার পঠিত
ইসলামে মানবিক জীবনের নানা দিক

সুপ্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বস্তুগত উপায়-উপকরণকে উন্নয়নের সিঁড়ি মনে করে। সভ্যতার নির্মাণ বা ধ্বংস, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর উত্থান-পতন কোনো কিছুই মানুষকে এই চিন্তা থেকে দূরে সরাতে পারেনি। মানুষ তার জাগতিক ভোগ-বিলাসের জন্য নিত্যনতুন উপায়-উপকরণ আবিষ্কার করেই চলেছে। এর জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে হয় না, সে নিজেই দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়।


তবে এমন মানসিকতাই মানুষকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, হিংসা-বিদ্বেষ ও সংঘাতের মুখোমুখি করে। বস্তুত জাগতিক উপায়-উপকরণ ব্যবহারে এমন নীতিমালা ও বিধান প্রণয়ন করা আবশ্যক, যার আলোকে সাদা ও কালো এবং ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য দূর হবে। আর সবাই মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার পাবে। মানুষের ভেতরে এই চিন্তা জাগ্রত করতে হবে—এই জীবন সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।


এই জীবনের পর এক চিরস্থায়ী জীবন শুরু হবে। তাই সাময়িক এই জীবনের প্রয়োজন পূরণ, এর সুযোগ-সুবিধা ভোগ এমন নীতিমালার আলোকে করতে হবে, যেন চিরস্থায়ী জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও ভাগ্যে জোটে। উভয় জগতে সাফল্য লাভের নীতি ও বিধান কীর্তিমান ও মানবপ্রেমী ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে অর্জিত হয়। তাঁরা হলেন নবী ও রাসুল।


এই ধারার শেষ ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)। যাঁর আহ্বান, যাঁর জীবনাদর্শের প্রতিটি পাতা কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের পথনির্দেশের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাঁর আগে এই পৃথিবীতে আগমনকারী সব নবী-রাসুলের শিক্ষা, সহিফা (অপ্রধান ধর্মগ্রন্থ) ও কিতাব (প্রধান ধর্মগ্রন্থ) অস্তিত্ব হারিয়েছে। এর কোনোটিই আপন অবস্থায় সংরক্ষিত নেই। এখন তাঁদের যে ধর্মবিধান পাওয়া যায়, তা হয়তো পরবর্তীদের মনগড়া অথবা বিলোপ-বিকৃতির শিকার।

 

নববী শিক্ষার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ জন্যই এসব ধর্মগ্রন্থ আজকের নষ্ট পরিবেশ ও পশ্চাৎপদ মানুষ তা থেকে আলো গ্রহণ করতে পারে না। কারো কারো অপপ্রচার হলো ইসলামে জনকল্যাণমূলক কাজের কোনো সুযোগ নেই, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভিত্তিহীন। ইসলামী শিক্ষায় অন্যের প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যয় করাকে যতটা জোর দেওয়া হয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে তা কল্পনাও করা যায় না। নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ যদি একজন মুসলমানের কাছে এক বছর থাকে, তবে তার জন্য জাকাত দেওয়া ফরজ। এই অর্থ অসহায় ও দুস্থ মানুষের অধিকার। তাদের মধ্যেই তা বণ্টন করা হয়।

 

প্রচলিত আইনে কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তবে ঋণদাতা আদালতে মামলা করে ঋণ ও সুদ উভয়টি লাভের রায় নিয়ে আসে। সে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঘরবাড়িসহ যেকোনো স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে নিজের পাওনা আদায় করে নেয়। চাই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি ও পরিবার অনাহারে মারা যাক। অন্যদিকে ইসলাম মানুষকে শিখিয়েছে তুমি ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দাও, যতক্ষণ না তার অবস্থা ঠিক হয়। আর তুমি নেবে শুধু তোমার মূল টাকা। ইসলাম আরো শিখিয়েছে বিপদগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাকে যদি তুমি ক্ষমা করে দাও তবে তোমার জন্য অনন্য পুরস্কার রয়েছে। 

 

এ ছাড়া জাকাতদাতাকে বলা হয়েছে তুমি ঋণগ্রস্তকে জাকাত দাও, যেন সে তার ঋণ পরিশোধ করতে পারে। এতে তোমার সওয়াব ও প্রতিদান বৃদ্ধি পাবে। ইসলাম শিখিয়ে যদি তুমি কূপ খনন করে দাও, বাগান লাগিয়ে দাও, বিশ্রামাগার তৈরি করো, তবে মানুষ যত দিন এর দ্বারা উপকৃত হবে, তত দিন তুমি এর সওয়াব পাবে। এ জন্য মুসলিম সমাজে বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মুসলিম ইতিহাসে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সমাজসেবামূলক কার্যক্রম অতীতেও ছিল, এখনো আছে। মুসলমানের সমাজকল্যাণমূলক কাজ অস্বীকার করা দিনের দীপ্যমান সূর্য অস্বীকার করার মতো।

 

অপপ্রচারকারীদের অভিযোগ, প্রাকৃতিক যেসব বিষয় মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং যা মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় তার কোনোটারই বর্ণনা কোরআন বা ইসলামী শিক্ষা নেই। এটাও ভিত্তিহীন ও মিথ্যা দাবি। এর অসংখ্য প্রমাণ পবিত্র কোরআনে রয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি লোহা দান করেছি, যাতে আছে প্রচণ্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিদ কল্যাণ।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৫)

 

বর্তমানের যন্ত্রপাতির যে অভাবনীয় উন্নয়ন—সুই থেকে জেট বিমান পর্যন্ত সব কিছুর প্রতিই এই আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনে ফলফলাদি, বাগান, সবুজ প্রকৃতি, পশুপাখি, বৃষ্টি, পাহাড়-পর্বত ও প্রাণিজগৎ, মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ কোন বিষয়টি বর্ণিত হয়নি! মূলকথা হলো, ইসলামই মানবিক জীবন ও সমাজের রক্ষক। ইসলামই আগামী পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলেই পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।