ইতালি যাওয়ার প্রলোভনে লিবিয়ায় পাচার হওয়া ছেলেকে ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলনে করুণ আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মো. রবিনের পরিবার। রোববার (তারিখ উল্লেখ করতে পারেন) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে রবিনের মা রহিমা বেগম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
রহিমা বেগম জানান, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট সকালে আত্মীয় সাধনা বেগম (সাধুনী) তাদের বাসায় বেড়াতে এসে রবিনকে ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। পরিবারটি প্রথমে আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করলেও, সাধনা বেগম তাদের আশ্বস্ত করেন যে, তার ছেলেকেও এক ব্যক্তি মো. মনির হোসেন ইতালি পাঠিয়েছেন। পরে মনির ও তার স্ত্রী দিনা ইসলাম রবিনের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন এবং ১৪ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তি হয়।
পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মনির, দিনা ইসলাম ও আরও কয়েকজন রবিনের পাসপোর্ট এবং নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে যান। দিনা ও সাধনা জানান, মনির রবিনকে সঙ্গে নিয়ে ইতালিতে কর্মস্থলে নিয়ে যাবেন এবং পরবর্তীতে ঢাকায় ফিরে আসার পর বাকি ৯ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
তবে বাস্তবতা ছিল ভয়ংকর। রবিনের বাবা জানান, কিছুদিন পর তারা জানতে পারেন, ছেলেকে ইতালি নয়, লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে রবিন নিজেই ফোনে কাঁদতে কাঁদতে পরিবারকে জানান, "তোমরা টাকা না পাঠালে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।"
সন্তানের জীবন বাঁচাতে তারা বিভিন্ন তারিখে মনিরের বাবা কালাম হাওলাদার, স্ত্রী দিনা ইসলাম, সাধনার মেয়ে রেখা আক্তার এবং মনিরের বোন সিমার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান। এছাড়া নগদ অর্থসহ সর্বমোট প্রায় ১৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
তবুও সন্তানের কোনো খোঁজ মেলেনি। রবিনের বাবা জানান, ২০২4 সালের মার্চ মাস থেকে তারা রবিনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না। পরিবারের ধারণা, মানব পাচারকারীরা তাদের ছেলেকে নির্যাতন করে হয়তো হত্যা করেছে।
এ অবস্থায় রবিনের পরিবার সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে, যাতে করে অন্তত তাদের ছেলের হদিস পাওয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে রবিনের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি তার স্কুলের শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।