মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামতে সময় লাগবে এক বছর: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন যে চলমান মূল্যস্ফীতি দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো কারণে ঘটেনি এবং এর হার আগের পর্যায়ে নামতে এক বছরের মতো সময় লাগবে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দ্রুতই কমতে শুরু করবে।
আজ মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের এক সেমিনারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগের মতো ৬ শতাংশে নামতে বড়জোর এক বছর সময় লাগবে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে।’
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে শামসুল আলম আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন বড় আলোচনার বিষয় (বিগ ক্রাই)। সবাই এটি নিয়ে চিন্তিত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের অভ্যন্তরীণ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়েনি। এটি বাইরে থেকে এসেছে।’
ডিমের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। যদি ডিম ব্যবসায় সিন্ডিকেট থাকে, তাহলে তা ভাঙবে। ডিমের দাম অবশ্যই কমবে। কারণ, ডিম পাচার হয়ে দেশের বাইরে যায় না। দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকটের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। আমি অবশ্য এখনই সিন্ডিকেটকে দায়ী করব না।’
সেমিনারের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশের জন্য মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়ানো: কোরিয়া থেকে শিক্ষণীয়’। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপক (সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সরকার খাত) হুন সাহিব সুহ। বক্তব্য দেন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক। বিশেষ আলোচক ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ও প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়িয়ে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে কোরিয়া থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হলে আমাদের বাণিজ্যনীতি নতুন করে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। রপ্তানির ঝুড়িতে পোশাক খাতের বাইরে আরও পণ্য বাড়াতে হবে। এ ছাড়া উদ্ভাবন, দক্ষ শ্রমিক ও উচ্চ উৎপাদনশীলতার মাধ্যমেই আমরা এই ফাঁদ এড়াতে পারব।’
কোরিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা হুন সাহিব সুহ বলেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে কোরিয়া শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছিল। কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ৭৮ শতাংশ বিনিয়োগ হয়। এর বেশির ভাগ বেসরকারি বিনিয়োগ। মানবসম্পদ উন্নয়নে কোরিয়া ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। শিল্প খাতের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা থাকায় চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
হুন সাহিব সুহ আরও বলেন, কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৯৫ শতাংশ বিনিয়োগই বেসরকারি খাতের। কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে উৎপাদন খাত শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। এ জন্য দক্ষ মানবশক্তি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে নীতি প্রণয়নে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার সুপারিশ করেন সিপিডির ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, সামস্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের কাজটি রাজনীতিমুক্ত হতে হবে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে।
প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘দেশে অনেক ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু শিল্প খাতের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি পাওয়া যায় না। গত এক দশকে আমরা পোশাক খাতের পাশাপাশি চামড়ার পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানির সম্ভাবনার কথা শুনেছি। কিন্তু কার্যকর নীতির অভাবে এসব খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’ মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে দেশের অর্থনীতিকে কোরিয়ার মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরের পরামর্শ দেন পিআরআইয়ের জাইদি সাত্তার।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫