|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৬ জুন ২০২৫ ০৯:৩২ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৬ জুন ২০২৫ ০১:৪৭ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছর মেয়াদে শর্তসাপেক্ষে সম্মতি বিএনপির


প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছর মেয়াদে শর্তসাপেক্ষে সম্মতি বিএনপির


ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-


 

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত না হলে মেয়াদ নির্ধারণের প্রস্তাবে রাজি নয় বিএনপি। দলটির স্পষ্ট বক্তব্য—সরকার যদি সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা ধরে রাখে, তাহলে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করা যেতে পারে। অন্যথায়, এ ধরনের প্রস্তাবে বিএনপির সমর্থন মিলবে না।
 

সংলাপে বিএনপির অবস্থান

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ষষ্ঠ দিনের সংলাপে বিএনপি জানায়, সাংবিধানিক নিয়োগ নিয়ে যে কমিটি বা পর্ষদ গঠনের প্রস্তাব উঠেছে, তাতে দলটি একমত নয়। বিএনপি মনে করে, এ ধরনের নিয়োগ কমিটি বা প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠিত হলে সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ নির্ধারণে দলটি সমর্থন দেবে না।
 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সংলাপে বলেন, তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পক্ষে। তবে সেই শক্তি আসতে হবে বিদ্যমান আইন সংস্কারের মাধ্যমে, ক্ষমতা খর্ব করে নয়।
 

অধিকাংশ দলের একমত, বিএনপির ভিন্নমত

বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল যেমন জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ ২৩টি দল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তারা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠনেরও পক্ষে।
 

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে তিনটি ছাড়া সবাই এ প্রস্তাবে একমত হয়েছে। রোববারের সংলাপে কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
 

‘ক্ষমতাধর’ এনসিসির পরিবর্তে সীমিত কমিটি প্রস্তাব

প্রথম দফায় সংবিধান সংস্কার কমিশন এনসিসি গঠনের প্রস্তাব দেয়। এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, সংসদের দুই স্পিকারসহ নয় সদস্যের একটি শক্তিশালী কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশন, পিএসসি, সিএজি প্রভৃতি সংস্থায় নিয়োগের কথা বলা হয়।
 

তবে নতুন প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। প্রস্তাবিত নিয়োগ কমিটিতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের দুই স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধী দল ব্যতীত অন্য দলের একজন সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি—মোট ৭ সদস্য। তবে এই কমিটির ক্ষমতা থাকবে নির্বাচন কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশন নিয়োগে সীমাবদ্ধ। প্রতিরক্ষা বাহিনী, অ্যাটর্নি জেনারেল কিংবা সিএজি নিয়োগ থাকবে সরকারের হাতে।
 

সংসদ ভেঙে গেলে এই নিয়োগ কমিটিও বিলুপ্ত হবে, যা এনসিসির চেয়ে অনেক বেশি সীমিত পরিসরের ক্ষমতাসম্পন্ন।
 

বিএনপির বিকল্প প্রস্তাব ও আইন সংস্কারের দাবি

বিএনপি বলেছে, এনসিসির মতো কোনো পর্ষদ কিংবা নিয়োগ কমিটি নয়; বরং বিদ্যমান আইন শক্তিশালী করলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে। দলটির মতে, ক্ষমতা খর্ব না করেও সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব যদি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যুক্ত হয়।
 

২০২২ সালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য শেখ হাসিনা সরকার যে আইন করেছে, বিএনপি শুরুতে তার সমালোচনা করলেও এখন আইন সংস্কারের মাধ্যমে কার্যকর সমাধানের পক্ষে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সরকারের প্রভাবমুক্ত, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন আইন সংস্কার, কমিটি নয়।”
 

দলীয় সিদ্ধান্ত: ১০ বছর মেয়াদে সম্মতি, তবে শর্তযুক্ত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব দল সমর্থন করবে, তবে তার শর্ত হলো, নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকতে হবে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
 

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, “এ তথ্য সঠিক নয়। যদি এনসিসির মতো পর্ষদ থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণেও বিএনপি রাজি নয়।”
 

অন্যান্য দলের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া

জামায়াতের সহকারী মহাসচিব রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় সব দল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে একমত। এনসিসির মতো পর্ষদের বদলে নিয়োগ কমিটি হলেও তারা রাজি। এবি পার্টির মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নির্বাচন কমিশনে সরকারের নিয়োগ মানেই অবাধ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ। এতে যদি ঐকমত্য না হয়, সামনে গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য।”
 

গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি প্রমুখ বলেন, “ঐকমত্যের জন্য সবাইকে ছাড় দিতে হবে।”
 

এনসিপির আখতার হোসেন জানান, সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২৭টি দল প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও নিয়োগ কমিটি গঠনে একমত।
 

সংলাপে চিরকুট বিতর্ক ও হাস্যরস

বিএনপির অবস্থানকে কেন্দ্র করে সংলাপে চিরকুট বিতর্ক দেখা দেয়। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রথমে নিয়োগ কমিটির পক্ষে কথা বললেও পরে বিএনপির মতো বিরোধিতা করেন। চিরকুট হাতে পাওয়ার পর অবস্থান পাল্টে নেওয়া নিয়ে সংলাপে হাস্যরসের জন্ম হয়।
 

মূলনীতির প্রশ্নে মতানৈক্য

সংলাপে সংবিধানের মূলনীতিগুলো নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি ও জামায়াতসহ অধিকাংশ দল সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল চায়। অন্যদিকে বাম দলগুলো চায় ধর্মনিরপেক্ষতা। এ নিয়েও ঐকমত্য হয়নি।
 

জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “জোনায়েদ সাকিকে ১০ মিলিয়ন ডলার দিলেও তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়বেন না। আমিও ৫০ বিলিয়ন ডলার পেলেও আল্লাহর ওপর আস্থা ত্যাগ করব না।” এ সময় পাশে থাকা একজন বলেন, “তাহলে সাকিকে এত কম দিয়ে নিজে এত বেশি নিলেন কেন?”—এতে আবারও হাসির রোল পড়ে।
 

উপস্থিতি ও সঞ্চালনা

সংলাপ সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫