প্রকাশকালঃ
০২ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ ২০৩ বার পঠিত
গত মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডারের নির্ধারিত দাম ছিল ১,২৮৪ টাকা, গতকাল সন্ধ্যা থেকে তা বেড়ে হয়েছে ১,৩৬৩ টাকা
বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৮০০ টাকায়। দাম নির্ধারণে যৌক্তিকতা নেই।
দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির দরদাম নির্ধারণের দায়িত্ব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। বিশ্ববাজার এবং স্থানীয় আর্থিক সংশ্লেষ, বাজার ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে নিয়মিত এলপিজির সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করছে জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত কয়েক মাস ধরে রান্না ও পরিবহনের এ জ্বালানির দাম টানা বাড়ছে। এর পরও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিইআরসির নির্ধারিত দামের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না রাজধানীসহ দেশের সব জেলায়। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশ চড়া দামে বোতলজাত গ্যাস কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডার। গতকাল এ সিলিন্ডারের দাম ১৩৬৩ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। গত মাসে এ সিলিন্ডারের দাম ছিল ১২৮৪ টাকা। আইন-নিয়মের মধ্যেই গতকাল সন্ধ্যা থেকে আগের দামের সঙ্গে ৭৯ টাকা যুক্ত হলো। প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১১৩ দশমিক ৬১ টাকা। কিন্তু দাম নিয়ে গ্রাহক অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তারা বলছেন, এক বছরের বেশি সময় ধরেই তারা নির্ধারিত সময়ে এলপিজি কিনতে পারছেন না। বিক্রেতাকে ৫০-৬০ টাকার মতো বেশি দিতে হতো। গত তিন মাস ধরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে এ গ্যাস। গতকালের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর খুচরা দোকানদাররা এলপিজির দাম আরও বাড়িয়ে বিক্রি করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
গত সপ্তাহে রাজধানীর রামপুরা, আফতাবনগর, নতুনবাজার, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, লালবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডার। তবে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, এ দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম বাড়ানো হয়। এ গ্যাস না থাকলে বাসায় রান্না করা যায় না। কেননা অন্য বিকল্পগুলো আরও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। এমনকি টাকা পরিশোধের রসিদ চাইলেও দিতে চায় না বিক্রেতারা। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ সব জেলায় এলপিজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এলপিজি বোতলজাত এবং বিপণনে জড়িত একটি কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিইআরসি সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করছে সর্বনিম্ন ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় নিয়ে। তাই ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কমিশন বা লাভ বেশি থাকছে না। তাই পাইকারি পর্যায়ে ও খুচরা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না। তবে একজন ডিলার জানিয়েছেন, এলপিজি কোম্পানির গেট থেকেই তারা বেশি দামে কিনছেন। স্বাভাবিকভাবে তারা এবং খুচরা বিক্রেতারা তাই বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের মূল্যায়ন ও দাবি বিবেচনায় নিয়েই এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু খুচরা বাজারে মূল্যহার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের নৈতিক সমস্যা রয়েছে। বিইআরসি এবং জেলা প্রশাসন নির্ধারিত দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করতে এখন অভিযান চালাচ্ছে।
অতিরিক্ত দামে এলপিজি বিক্রির বিষয় নিয়ে গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। তিনি বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে পরিবেশকদের অনেক এজেন্ট থাকে। তাদের আরও সাবএজেন্ট থাকে। তিন-চার হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে যায়। এতে ঘোষিত দামের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সহনীয় দামে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে চেষ্টা করবে হবে। তিনি বলেন, কমিশন দামের বিষয়টি নজরদারি করছে।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, দেশে ২০০৯ সালে এলপিজির বার্ষিক চাহিদা ছিল প্রায় ৬৬ হাজার টনের মতো। বর্তমানে চাহিদা ১৪ লাখ টনের বেশি। পাইপলাইন গ্যাস-সংযোগ অনেক বছর ধরে বন্ধ থাকায় এ চাহিদা ক্রমে বাড়ছে।