মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:-
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে একটি এক্সকেভেটর মেশিন জব্দ করে মোবাইল কোর্ট। মেশিন জব্দের পাশাপাশি জমির মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। তবে জমির মালিকের বদলে আসামী করা হয় সাদিকুল ইসলাম নামের একজন সাধারণ কৃষককে। অথচ সাদিকুল ইসলামের জমি কাটার সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। এমনকি ওই এলাকায় তার কোন জমিও নেই। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
চককীর্তি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের খামখেয়ালিপনায় জমির মালিক না হয়েও আসামী করার এমন ঘটনা ঘটেছে শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে। মাটি কাটার অভিযোগে মামলায় একমাত্র আসামী করা হয়েছে একই গ্রামের মৃত বদির উদ্দিনের ছেলে মো. সাদিকুল ইসলামকে (৬৭)। অথচ বসন্তপুর মৌজার ৩৫৪ নম্বর দাগের ৫৫ শতক জমি কাটার মামলায় আসামী করা হয়নি জমির মালিকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারী দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তোফিক আজিজ। এসময় একটি এক্সকেভেটর মেশিন জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদের হেফাজতে রাখা হয়।
মামলার আসামী সাদিকুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটা সংক্রান্ত কোন বিষয়ের সাথে আমার সম্পর্ক নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা জমিটির মালিকও নয় আমি। এমনকি ওই এলাকায় আমার কোন জমি নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই ফেসবুকের মাধ্যমে দেখে স্থানীয়রা জানান, আমার নামে মামলা করা হয়েছে মাটি কাটার অপরাধে। কিন্তু আমি নিরাপরাধ মানুষ হলেও আমার বিরুদ্ধে মামলা কেন করা হলো, তার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি। জেলা প্রশাসকের নিকট দাবি জানান, এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, সাদিকুল ইসলাম নামের যে ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। কারন জমির মালিক তিনি না। ওই এলাকাতে তার কোন জমি নাই। তাহলে কেন তাকে আসামী করা হলো?
পলাশ আলী নামের এক যুবক বলেন, পুকুর খননের ওখানে সাদিকুল ইসলামের কোন জমি নাই। এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিস কিভাবে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি, তা জানি না। এর সুষ্ঠ সমাধান চাই। অন্য মানুষের জমি, কিন্তু আসামী করা হয়েছে এবছর হজ্ব যাত্রী সাদিকুল ইসলামকে। বিষয়টির সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা করা হোক।
আসামী সাদিকুল ইসলামের ভাই আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম জানান, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। কোথায় কার জমি রয়েছে, তা আরও ভালো জানার কথা স্থানীয় ভূমি অফিসের। কিন্তু তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই দেয়া হয়েছে মামলা। আমরা সুযোগ পেলে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।
চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের ০৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সাদিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাটি কাটার অপরাধে একটি মামলা দেয়া হয়েছে। তার জমি নয়, তার পরেও তিনি মামলার আসামী। আমি জানি, জমিটি তার নয়। যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হোক।
জমির মালিক হুমায়ন কবীর জানান, আমিসহ আরও কয়েকজন অংশীদার রয়েছে মাটি কাটার ৩৫৪ নম্বর দাগে। কিন্তু জমির মালিকদের কাউকে আসামী করা হয়নি। এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও আসামী করা হয়েছে সাদিকুল ইসলামকে। বিষয়টিতে আমরাও হতবাক হয়েছি।
মামলার বাদি ও চককীর্তি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন বলেন, সাদিকুল ইসলাম ওই এলাকার প্রভাবশালী লোক। স্থানীয়রা তার কথা বলায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে তা ভুলও হতে পারে। জমির মালিকানা যাচাই-বাছাই না করেই মামলা দায়েরের কারন জানতে চাইলে এবিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা। এমনকি ৩৫৪ নম্বর দাগের জমির মালিক কে তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি।
শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌফিক আজিজ জমির মালিককে বাদ দিয়ে অন্যজনকে আসামী করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এক্সকেভেটর মেশিন জব্দ করা হয় ২৯ জানুয়ারী। কিন্তু তার আগেই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে মাটি কাটার অভিযোগে জমির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, গত ০১ ফেব্রুয়ারী মামলার তদন্ত করতে সরেজমিনে গিয়ে সাদিকুল ইসলাম জমির মালিক নয়, এমন তথ্য পেয়েছি। আসামী ও স্থানীয়রা জমির মালিক অন্য কেউ দাবি করছে। আসামী ও বাদিকে জমির কাগজপত্র দেখার জন্য বলা হয়েছে।