দেশি বিস্কুট রপ্তানি হয় ৭০ দেশে

প্রকাশকালঃ ২৯ মে ২০২৩ ০৫:৪৮ অপরাহ্ণ ১৩১ বার পঠিত
দেশি বিস্কুট রপ্তানি হয় ৭০ দেশে

বিস্কুট রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। তবে সাম্প্রতিকালে কিছুটা কমেছে। তিনটি কারণের কথা বলছেন রপ্তানিকারকেরা।

দেশে যেমন বিস্কুটের বড় বাজার রয়েছে, তেমনি বিদেশেও রপ্তানি হয় বাংলাদেশের বিস্কুট। রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭০টি দেশে বিস্কুট রপ্তানি হয়। অবশ্য রপ্তানির পরিমাণ এখনো খুব বেশি নয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশে তৈরি বিস্কুট রপ্তানি বাড়ছিল। করোনাকালেও রপ্তানি বেড়েছে। তবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি কিছুটা কমে যায়। চলতি অর্থবছরও এই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিস্কুট রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ।

রপ্তানিকারকদের দাবি, বিস্কুটের মূল কাঁচামাল ময়দা ও চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনাকালে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর বিস্কুট রপ্তানি হয়েছে। তবে ভারতের কাছে গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্কুটের বাজার অনেকটা হারিয়েছে বাংলাদেশ।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সহসভাপতি ছৈয়দ মুহাম্মদ সোয়াইব হাছান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে চিনির কেজি ১২০ টাকার ওপরে। এই দামে চিনি কিনে বিস্কুট উৎপাদন করে ভারতের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় পারছি না। সেখানে চিনির দাম অনেক কম।’ তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে চিনি কর বা সুগার ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো চিনির বিকল্প হিসেবে ফ্রুকটোজ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা উচ্চ শুল্কের কারণে ফ্রুকটোজ আমদানি করতে পারছে না।


কত রপ্তানি
ইপিবি তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলারের বিস্কুট রপ্তানি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি। বিস্কুট ও সমজাতীয় পণ্যকে শুকনা খাবার শ্রেণিতে রপ্তানি আয় দেখায় ইপিবি। এই শ্রেণিতে মোট রপ্তানি প্রায় ২৫ কোটি ডলার, যা আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিশেষ দিক হলো, বিস্কুট রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিস্কুট রপ্তানি হয়েছে, যা বেড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আবার বিস্কুট রপ্তানি কমে যায়।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩ কোটি ৩ লাখ ডলারের বিস্কুট রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম। বিস্কুট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, রপ্তানি আয় কমার তিনটি কারণ থাকতে পারে।

প্রথমত, সংশ্লিষ্ট বাজারে স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহে যে সংকট করোনালে তৈরি হয়েছিল, সেটা কেটে গেছে। এ কারণে তাদের আমদানি চাহিদা কমেছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে বিস্কুটের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তৃতীয়ত, বছরখানেক বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে জাহাজের কনটেইনার সংকটসহ কিছু সমস্যা ছিল। সেটার প্রভাব হয়তো এখনকার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।


কোন দেশে রপ্তানি
বিস্কুট রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় বাজার সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, মাদাগাসকার, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রয়েছে রপ্তানিবাজারের তালিকায়।

ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট অ্যানালাইসিস রিসার্চ অ্যান্ড কনসাল্টিং গ্রুপের (আইএমএআরসি গ্রুপ) বাজার জরিপের তথ্যানুযাযী, গত বছর বিস্কুটের বৈশ্বিক বাজার ছিল ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। ২০২৮ সালে এই বাজারের আকার বেড়ে ১৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। তার মানে বাংলাদেশ বর্তমানে বিস্কুটের রপ্তানি বাজারের খুব ছোট্ট হিস্যাই নিতে পেরেছে। তবে বড় সুযোগ রয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যে মসলা, শর্ষের তেল, সুগন্ধি চাল ইত্যাদি কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়, তার মূল ক্রেতা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিস্কুটের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক হলো, এর ক্রেতা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকেরাও। কারণ, বিশ্বজুড়ে বিস্কুটের স্বাদ মোটামুটি একই। এ কারণে রপ্তানি বাজার ধরার সুযোগ আছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি কোনো কোনো কোম্পানির কাছ থেকে চুক্তিতে বিস্কুট উৎপাদন করাচ্ছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ কম খরচে বিস্কুট রপ্তানি করতে পারে। আমদানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন খরচ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, সাময়িক রপ্তানি কমলেও সম্ভাবনা কমেনি। প্রাণের তৈরির পটাটা বিস্কুটের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতে এই বিস্কুট ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। এখন ভারতের ব্র্যান্ডগুলো পটাটার মতো স্বাদের বিস্কুট তৈরি করছে।